মা,মাটি ও মানুষ; জীবনে এই তিন নিয়ে চলেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাই পরিবারে বড় ভাই নামে পরিচিত।
পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও বড় ভাই নামে পরিচিত। দেশের সেবায় ট্রাস্টি বোর্ড করে ১৯৭২ সালে সাভারে গড়ে তুলেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভালোবাসা অপরিসীম। বর্তমানে দীর্ঘ কর্মময় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাফরুল্লাহ। কিন্তু চিন্তা ও মননে ছিলেন যুবক।
মঙ্গলবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৮১ বছর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন।
তার শেষ লক্ষ্য ছিল একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে অতি সাধারণ মানুষ ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে পারবে। মৃত্যুর আগে আরাধ্য কাজ শেষ করে যেতে চেয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এদিকে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।