Logo
Logo
×

জাতীয়

ক্রেতাশূন্য মাছবাজার, আগুন নিভছে না সবজি-মাংসে

Icon

মানিক রাইহান বাপ্পী

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১১ পিএম

ক্রেতাশূন্য মাছবাজার, আগুন নিভছে না সবজি-মাংসে

বড় প্লেটে সাজানো আছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। ডালার আবদ্ধ পানিতে জীবিত মাছগুলো লাফাচ্ছে। শুধু ক্রেতা এলেই তাদের হস্তান্তর করার পালা। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘ সময় পর ক্রেতা এলেও দাম শুনে নিচ্ছেন বিদায়। আবার কেউ অল্প কিছু মাছ নিচ্ছেন। এতে হতাশার ছাপ নিয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার বসন্ধুরা এলাকার জোয়ারসাহারা ও বসুন্ধরা কাঁচাবাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তবে মাছের কাটতি কম হওয়ার কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে, মাছের দাম ঊর্ধ্বগতি হওয়ার ফলে মাছ থেকে কিছুটা বিমুখ হচ্ছেন ক্রেতারা। এর বিকল্প হিসেবে সবজি অথবা মুরগি কিনছে।
রমজানের অর্ধেক রোজা শেষ হলেও প্রায় কোনো পণ্যের দাম কমেনি। রমজানের শুরুর দিকে যেমন দাম ছিল তেমনই আছে।
এদিকে ব্রয়লার প্রতিকেজি ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।  
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি আকৃতির রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৬০ টাকা। জাপানি মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৯০ টাকা। মৃগেল মাছ ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। কই মাছ কেজি প্রতি ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। গরিবের মাছ বলে পরিচিত পাঙাশও বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা।

শুক্রবার বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আব্দুল হামিদ। মাছ বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এত দাম দিয়ে মাছ নেওয়া যায় না। রমজান মাসে মাছ খেতে তেমন ভালোও লাগে না। শুধু এক বেলার জন্য অল্প মাছ নিলাম। সবজির দাম বেশি হলেও সেটি ছাড়া ভাত খাওয়া কঠিন বললেই চলে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ক্রেতা বলেন, রোজায় নাকি বাজার মনিটরিং করা হয়। দাম তো বেড়েছে রোজার আগেই। সব ধরনের মাছে দাম বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ। শুধু কি মাছের দাম বেড়েছে এমনটি নয়, মাংসতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি সব কিছুর দাম বেড়েছে।  

মাছ ব্যবসায়ী জগদীস বলেন, মাছের দাম বাড়তি, বাজারে মানুষ কম। এখন আমাদের কিনতে হয় বেশি দামে। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এত বড় মাছের বাজারে হাতেগোনা ৫ থেকে ৭ জন ক্রেতা। যত না ক্রেতা, তার চেয়ে মাছের দোকানের সংখ্যাই বেশি। ক্রেতাদের সবারই চোখ কম দামি মাছের দিকে। তবে সেই কমদামি মাছের দামও বাজারে প্রায় ২০০ টাকা কেজির নিচে না।

সবজি বাজারে দেখা গেছে, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো ৬০; অথচ রোজার আগে ছিল ৩০ টাকা, শসাপ্রতি কেজি ৬০; অথচ কয়েক দিন আগেই ছিল ৪০, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সাজনা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা কেজি দরে। সিম প্রতি কেজি ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ২০-৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা রোজার আগে ছিল ১০০ টাকা।

অন্যদিকে মুদি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা, সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, ডিম ৪২ টাকা হালি, আখের গুড় ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম কমছে না কেন এমন প্রশ্ন সবজি ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, এখন তুলনামূলক সবজি কম উৎপাদন কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা কমেনি। ফলে দামও কমছে না। রোজার মাস শেষ হলে হয়তো কমতে পারে।

বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আবুল হাসেমের সঙ্গে কথা হয় সবজি বাজারে। তিনি বলেন, ভাই অল্প বেতনে চাকরি করি। মাংস কেনার সাধ্য নেই। মাছেরও তো কম দাম না। সবজি খেয়ে দিন পার করছি।

বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত মাসুম রেজা। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পুরো বাজার ঘুরছি। নিজের সাধ্যের মধ্যে যা পাব তা নিব। এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কোনো কিছুরই তো দাম কম না।

জনতা ব্যাংকে কর্মরত এখলাস মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, রমজানের শুরুতে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছিল, ভেবেছিলাম কিছু দিন পরে কমবে। অর্ধেক রোজা শেষ হলেও এখনো দাম কমানোর কোনো ইঙ্গিত পাচ্ছি না। সরকার নামকাওয়াস্তে একদিনের জন্য ব্রয়লার ১৯৫ টাকা করেছিল। পর দিন থেকে আবার ৩০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে কি লাভ হলো।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম