Logo
Logo
×

জাতীয়

সওজের টাকার মেশিন নজরুলের যত সম্পদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৬:২১ পিএম

সওজের টাকার মেশিন নজরুলের যত সম্পদ

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপসহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম যেন টাকার মেশিন। বছরে বছরে জমি রাখেন। নিজ নাম, পরিবার আত্মীয় স্বজনের নামে ৩২টি অ্যাকাউন্ডে জমা রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। 

নজরুলের মাসিক বেতন সাকুল্যে ৫২ হাজার টাকা। ১৯৯৮ সালে চাকরির শুরুতে তার মাসিক বেতন ছিল ৮ হাজার টাকা। ৯৮ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি আয় করেছেন ৬০ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ বিভিন্ন ব্যাংকে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে ৩২ অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছেন কোটি কোটি টাকা। তার একার ‘উপরি’ আয়ে পরিবারের সবাই এখন কোটিপতি। গড়েছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এত অভিযোগের পরও দিব্যি অফিস করছেন। কোনো কিছুই গায়ে মাখছেন না।

অর্থ পাচার মামলার তদন্ত শেষে নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন, ভাই তরিকুল ইসলাম, বোন সেলিনা বেগম, চাচতো বোন নিলুফা বেগম ও হালিমা বেগমের নামে শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার উপ-পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা এ মামলার তদন্ত শেষ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম বর্তমানে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত। এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মোবাইল ফোনে কল করেন এ প্রতিবেদক। পরিচয় দিয়ে কুশলাদি বিনিময়ের পর দুর্নীতির মামলায় তিনি জামিনে আছেন কিনা-এই প্রশ্ন করতেই নিরিবিলি সময়ে ফিরতি কল করার কথা জানিয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আর তিনি কল করেননি।

এ প্রতিবেদক ফের কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন বরিশাল জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন সংস্থার সাবেক উপ-পরিচালক এদিপ বিল্লাহ।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২); দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা হয়। এতে নজরুল ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ পারভীন ও ভাই তরিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়। এরপর মামলার তদন্তে নজরুল ইসলামের দুর্নীতির সঙ্গে তার বোন সেলিনা বেগম ও চাচাতো দুই বোন নিলুফা বেগম ও হালিমা বেগমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। নজরুল ইসলাম তার দুর্নীতিলব্ধ আয় নিরাপদ করতে এই তিনজনের নামে ব্যাংক হিসাবে এফডিআর করেন। মামলার অভিযোগপত্রে এদেরও আসামি করা হবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, নজরুল ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ পারভীন গৃহিণী। তার নিজস্ব কোনো আয় নেই। তবে ২০২১-২২ করবর্ষে শাহানাজ পারভীন তার দাখিল করা আয়কর রিটার্নে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসাবে দেখিয়েছেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে তার ব্যবসার কোনো তথ্য মেলেনি। নজরুল ইসলামের ভাই তরিকুল ইসলামও বেকার। তার আয়ের কোনো উৎস নেই।

অথচ দুদকের প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় নজরুল ইসলাম, স্ত্রী শাহানাজ পারভীন, ভাই তরিকুল ইসলাম, বোন সেলিনা বেগম ও চাচাতো বোন নিলুফা বেগম ও হালিমা বেগমের নামে ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বরিশাল শাখায় নজরুল ইসলামের নামে ১০টি এফডিআর ও সাতটি সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৭ টাকা।

স্ত্রী শাহানাজ পারভীনের নামে দুটি বেসরকারি ব্যাংকের বরিশাল শাখায় ছয়টি এফডিআর অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬২ টাকা। ভাই তরিকুল ইসলামের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের বরিশাল শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে লেদেন হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের বরিশাল শাখায় বোন সেলিনা বেগম, চাচাতো বোন নিলুফা বেগম ও হালিমা বেগমের নামে সাতটি এফডিআর অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৩ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭০৪ টাকা। গত বছরের ৩০ মে বরিশাল বিশেষ জজ আদালতের আদেশে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এফডিআর করা এ অর্থ অবরুদ্ধ করা আছে।

মামলার তদন্তকালে নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহানাজ পারভীনের নামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদের তথ্যও নিশ্চিত হয়েছে দুদক। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ আদালতের নির্দেশে ক্রোক করা হয়েছে। সম্পদ বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিবছরই নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাফ-কবলা দলিলে জায়গা-জমির মালিক হয়েছেন।

২০১৪ সালের ১৯ মে বরিশালের সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাফ-কবলা দলিলে (নম্বর ৫৪০৩) নিজের নামে ৪ শতাংশ জায়গা কেনেন নজরুল ইসলাম। বগুড়া আলেকান্দা মৌজায় কেনা এই জায়গার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ২০ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর একই মৌজায় সাফ-কবলা দলিলে (নম্বর ১৩৩৯৩) দশমিক ২০ শতাংশ ভূমির মালিক হন তিনি। এই জায়গার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।

২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি একই মৌজায় (দলিল নম্বর ১২৯৩৫) স্ত্রী শাহানাজ পারভীনের নামে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ জমি কেনেন। দলিল মূল্য দেখানো হয় ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ওই মাসেরই ৩০ নভেম্বর (দলিল নম্বর ১৩৭০৭) স্ত্রীর নামে কেনেন তিন তলা ভবনসহ আরও ৬ শতাংশ জমি। যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম