গুলজা গণহত্যাসহ উইঘুরদের নির্যাতন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম
ছবি: যুগান্তর
গুলজা গণহত্যাসহ উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের চালানো নির্যাতনকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবি করে জাতিসংঘের অধীনে এসবের তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্ট।
একইসঙ্গে ওআইসি ও মুসলিম বিশ্বকে উইঘুরদের রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে গুলজা গণহত্যার ২৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘উইঘুর মুসলিমদের মুক্তি আর কতদূর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্ট আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিবেচনার মারপ্যাঁচে উইঘুর মুসলিমদের ইতিহাস সংগ্রাম, নির্যাতন, নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। ফিলিস্তিনি, মুর, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে মানুষ জানলেও চীনাদের রক্ষনশীল, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবস্থার কারণে উইঘুরদের বাস্তব পরিস্থিতি ও গুলজা ট্রাজেডি সম্পর্কিত তথ্য সাধারণ পর্যায়ে এখনো স্পষ্টভাবে পৌঁছায়নি।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলা হয়, ১৯৯৭ সালের জানুয়ারির শেষ সময় থেকে শুরু করে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের গুলজা শহরে স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের উপর চীন সরকারের দমন-নিপীড়নের সেই দুঃসহ ঘটনা গুলজা গণহত্যা নামে পরিচিত। এ সময় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি ১৬০০ মুসলিমকে সরকারি হিসেবেই গ্রেফতার করা হয়। নিরস্ত্র জনতার উপর এমন আগ্রাসনের ফলে অনেকই চীন থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তানে গেলে সেখানেও রেহাই হয়নি। তৎকালীন আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিহাসের ঘৃণিত ও কুখ্যাত গুয়ান্তানাম বে কারাগারে নতুন ঠিকানা হয়।
এমনকি চৈনিক বাহিনী মার্কিনিদের সহায়তায় সেখানে গিয়েও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারিরীক ও মানসিক নিপিড়ন চালায়। ওইসব বন্দীদের নিজ ধর্ম বিরোধী শিক্ষা দেয়া হয়, মান্দারিন ভাষা শিখতে বাধ্য করা হয়, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানসহ নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
বক্তারা বলেন, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে গুলজা হত্যাকাণ্ড চাপা পড়ে গেলেও বিশ্ব মিডিয়ায় চীন সরকারের আগ্রাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে চীনের বাইরেও উইঘুরদের পক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কথা বলছে ও প্রতিবাদী সংগঠন গড়ে উঠছে।
উইঘুরদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন শুধু কোনো ধর্মীয় বা মুসলিম ধর্মীয় ইস্যু নয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত জনপদ প্যালেস্টাইন প্রশ্নে সবাই যেমন একাট্টা, ঠিক তেমনই পদক্ষেপের মাধ্যমে উইঘুরদের বিরুদ্ধে সব ধরনের আগ্রাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। এই ইস্যুতে আর কোনো ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় চালবাজি বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ আর দেখতে চায় না।
গুলজা গণহত্যা দিবস ও চীনে ২২ লাখ তুর্কি ও উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদে এ ‘প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার’ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্ট ।
সভায় বক্তারা বলেন, সেপ্টেম্বর ২০২২ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বরাতে বিবিসি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় জিনজিয়াংয়ে মোট উইঘুর মুসলিম ১ কোটি ২০ লাখ। জিনজিয়াংয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত বন্দী শিবিরে বন্দী আছে আনুমানিক ১০ লাখ মুসলমান। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
চীনা সরকার মিডিয়ার সব কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের মুক্তিকামী জনতা তাদের সহযোগিতা পায়নি। মিয়ানমারের সরকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন বন্ধে চীনের পরোক্ষ যোগসাজশ রয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, চীনা সরকার মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে তারা এসব অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইসলামিক প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্টের আহ্বায়ক বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ মাওলানা আতাউর রহমান আতীকির সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর কাসেমি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শহিদুল্লাহ আনসারী, ইসলামী মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাহমুদুল হাসান, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়েদ আসআদ মাদানীর খলিফা মাওলানা আহসান হাবীব পীরে মাদানী, শাইখ মুফতি জুবায়ের গণী, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদের সভাপতি মুফতি ওসমান গনি চৌধুরী, মাওলানা ইমরান ফয়সাল যুক্তিবাদী, মাওলানা জামিল সিদ্দীকি, মাওলানা আশরাফ আল হারুন প্রমুখ।