স্বর্ণ চোরাচালানসংক্রান্ত একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে শীর্ষ খবরে।
এতে জানা যায়, মিরাজুল ইসলাম নামে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই), যিনি বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতেন, অর্থাৎ যার দায়িত্ব ছিল বিমানবন্দরে পাচার হওয়া স্বর্ণ উদ্ধারের, তিনি নিজেই সোনা চোরাচালানে জড়িত।
সম্প্রতি দুবাই থেকে স্বর্ণের বড় চালান নিয়ে ঢাকায় আসার পথে তিনি সাত সহযোগীসহ কাঠমান্ডুতে আটক হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে সোনার বার, স্বর্ণালংকারসহ ৪০ ভরি করে সোনা ছিল। তারা বাংলাদেশি হওয়ায় কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের মুক্তির জন্য নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। পরে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিয়ে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা দেশে ফিরে আসেন।
এ ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, দুবাইয়ের স্বর্ণ চোরাচালানচক্র কাঠমান্ডুকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করছে। এই চক্রে অনেক বাংলাদেশি জড়িত বলেও ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কাঠমান্ডুতে আটক এসআই মিরাজুলসহ তিনজনকে ছাড়িয়ে নিতে দুবাই থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জরিমানার ৭৬ লাখ নেপালি রুপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বোঝাই যাচ্ছে, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে রয়েছে বড় বড় ‘গডফাদার’। প্রশ্ন হলো, তারা কারা? কী তাদের পরিচয়? পাচারকৃত সোনার গন্তব্যই বা কোথায়?
শুধু নেপাল নয়, স্বর্ণ চোরাচালানচক্র বাংলাদেশকেও দীর্ঘদিন ধরে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে আসছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় ঘন ঘন পাচারকৃত সোনা উদ্ধারের ঘটনাই এর প্রমাণ। ধারণা করা যায়, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি স্বর্ণ নাগালের বাইরে চলে যায়।
ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত এবং সিলেটের ওসমানী এই তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহুবার স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আছে, বিমানবন্দরে কর্মরত কিছু ব্যক্তি আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্রের স্থানীয় এজেন্ট ও ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। অর্থাৎ এদেশীয় এজেন্টদের সহায়তায়ই আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র বিমানবন্দরে সোনার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়েই তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আর মাফিয়াচক্র গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট নিয়ে।
শর্ষের ভেতর ভূত থাকলে যে কোনো অপরাধই দমন করা কঠিন। এ ভূত তাড়ানো দরকার যে কোনো উপায়ে। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তবে প্রথমেই বিমানবন্দরে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। স্বর্ণ চোরাচালান রোধে দেশের ব্যাগেজ রুলেও পরিবর্তন আনা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাগেজ রুলে যেখানে ৫ থেকে ১০ ভরি পর্যন্ত স্বর্ণ বহনের নিয়ম, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী একজন বিমানযাত্রী স্বর্ণালংকার ও সোনার বারসহ মোট ২০ ভরি স্বর্ণ বহন করতে পারেন। পাচারকারীরা এই নমনীয় ব্যাগের রুলের সুযোগ নিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। স্বর্ণ পাচারের মূল হোতারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বর্ণ চোরাচালান রোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে।