২৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫১ এএম
ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া তিন প্রতারক। ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষর জাল করে কোডিভ টেস্টের নামে সারা দেশে থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছিল একটি প্রতারক চক্র। এ জন্য তারা টিকেএস গ্রুপের সিস্টার কনর্সান টিকেএস হেলফকেয়ার সার্ভিস নামে একটি ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। অফিসের জন্য জুলাই মাসে রাজধানীর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে আল-রাজী কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে।
মঙ্গলবার ডিবি গুলশান বিভাগের জোনাল টিম ঝালকাঠি ও ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক আব্দুল্লাহ আলামিন (ম্যানেজিং ডিরেক্টর), আবুল হাসান তুষার (চেয়ারম্যান) এবং মোহাম্মদ শাহিন মিয়াকে (মার্কেটিং ম্যানেজার) গ্রেফতার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, টেক্স সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন ধরনের নিয়োগপত্রসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।
ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, প্রতারক চক্রটি ভাড়া করা ঠিকানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি আবদেন করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২ উপজেলা ও ৪৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে কোভিড টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য তাদের ৫ হাজার ১২৬ জন সম্মুখ যোদ্ধা প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ভুঁইফোঁড় এই গ্রুপটি ভালো করেই জানে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো অনুসন্ধান করা হলে তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড টেস্ট, লোক নিয়োগ, ক্যাম্প স্থাপনের কোনো অনুমতিই দেওয়া হবে না। সে কারণে প্রতারক চক্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রশাসন শাখা-১ অধিশাখার স্বারক নম্বর ব্যবহার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে। এরপর নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালকেশন, লোক নিয়োগ এবং ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি নিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, চক্রটি ইতিমধ্যে ঢাকা এবং ঝালকাঠিতে বসে কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের ভুয়া অনুমোদন দেখিয়ে স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন হোম সার্ভিস চেষ্টা শুরু ও বুথ স্থাপন করেছে। স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত কোনোরকম সনদ এবং অভিজ্ঞতার না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় এ চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গুলশান জোনের ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এই চক্রের দুই মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুল্লাহ আল আমিন CIB (CareGivers institute of Bangladesh) এর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আল-ফালাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার আবুল হোসেন তুষারের অর্থায়নে ভুঁইফোড় এই কোম্পানিটি বানিয়েছে।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আবুল হাসান তুষার কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য এক হাজার টাকা, বিভিন্ন লোগো সম্বলিত আবেদনপত্র প্রিন্ট করার জন্য আরও এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগুলো জমা দেওয়ার জন্য একজন এমএলএসকে পাঁচশ টাকা দিয়েছে। সবমিলিয়ে আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সারা বাংলাদেশে ১০০টি ক্যাম্পাস স্থাপন করে।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা কমপক্ষে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছিল। একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র ও যুবকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক লাখ ছাত্র যুবককে ১০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আরও কয়েক কোটি টাকা বাগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উপসচিব জাকিয়া পারভীন শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।