নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও: দেলোয়ার নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১২:৫৩ এএম
গ্রেফতার দেলোয়ার। ফাইল ছবি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ধর্ষণচেষ্টা, শ্লীলতাহানি ও ভিডিওর ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে অস্ত্রও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হলো।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। তিনি সোমবার সকালে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোড থেকে রাত ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। আর মামলার প্রধান আসামি বাদলকে রোববার দিবাগত রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রসঙ্গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এর পর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেটি ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকেন। তিনি প্রাণপণ নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেননি। বরং হামলাকারীরা তার মুখে ও শরীরে লাথি মারেন। এর পর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চিৎকার করে আরেকজন।
এদিকে এ ঘটনার পর অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে তারা পুরো পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। এ কারণে ঘটনাটি স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে।
তবে ওই ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ওই নারী রোববার রাতে মামলা করেন। বেগমগঞ্জের ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী জানান, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে।
মামলার এজাহারের নারী উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণা করেন। গত এক মাস ধরে তারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা এই ভিডিও ছেড়ে দেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তার স্বামী তার কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তার স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যান। পরে ওই নারীর ভাই এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।