কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসিসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার নির্দেশ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ০৯:০৪ এএম
কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি। ফাইল ছবি
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতন করে সাজা দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আরিফুল ইসলামকে দেয়া ওই সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিতও করেছেন আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেয়ার বৈধতা প্রশ্নে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সব নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা। তিনি আদেশের বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আদালত আদেশে কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (সুলতানা পারভীন), সহকারী কমিশনার (এসি) রিন্টু বিকাশ চাকমা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন ও সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে আরিফুল থানায় যে অভিযোগ করেছেন, সেটি মামলা হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুনানির সময় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানির পর আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আরিফ। আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আরিফুল ইসলামকে দেয়া ওই সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল দিয়েছেন আদালত। আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজা প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হল। এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?’ জবাবে আদালত বলেন, ‘আমি নিজেও এ সব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।’
ইশরাত হাসান বলেন, ‘স্বীকারোক্তিতে আসামি আর তার বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কী অপরাধ তারও কোনো বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনো নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল এই বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এ ছাড়া দুইজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ওই সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন।