Logo
Logo
×

জাতীয়

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: দ্বিতীয় স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২০, ০৫:৩১ এএম

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: দ্বিতীয় স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?’ বিষয়ের ওপর ২০০৪ সালে একটি শ্রোতা জরিপের আয়োজন করে বিবিসি বাংলা।

সেই জরিপে শ্রোতাদের ভোটে শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় দ্বিতীয়তম স্থানে আসেন জাতীয় সংগীত রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আজ সোমবার তার জীবন-কথা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং তার বিশাল সাহিত্য কীর্তির জন্য তিনি বহু বাঙালির রক্তস্রোতে মিশে আছেন।

তিনি ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতকার, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। এক কথায় বহুমুখী প্রতিভার সম্বন্বয় ঘটেছিল তার বর্ণময় দীর্ঘ কর্মজীবনে।

তবুও তার কবি পরিচিতিই তাকে বিশ্ববরেণ্য করে তুলেছিল।  তাই রবীন্দ্রনাথকে ভূষিত করা হয়েছে 'বিশ্বকবি' বা 'কবিগুরু' নামে। কবিতাগুচ্ছের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ।

১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্ম।  বাবা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী।

ছোটবেলায় প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি নেননি। বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মাত্র আট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কবিতা লেখা শুরু করেন।  বয়সে বড় ক ভাগিনার উৎসাহে প্রথম কলম হাতে নেন তিনি। সে কবিতা পরে ছাপাও হয়েছিল একটি পত্রিকায়।

স্কুলে না গেলেও পাঞ্জাবে হিমালয় পাহাড় ঘেরা ডালহাউসি শহরে থাকাকালীন বাবার কাছে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতেন।

ওই পাহাড়ি শৈলাবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৩ সালে লিখেছিলেন তার প্রথম গান "গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বালে"।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যারিস্টারি পড়তে ১৮৭৮ সালে সতের বছর বয়সে ইংল্যান্ডে যান।

ইংল্যান্ডে থাকাকালীন  শেক্সপিয়রসহ অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন কবিগুরু। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে সাহিত্যের টানে আইনের পড়া শেষ না করেই কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি।

১৮৮৩ সালে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর মেয়ে ১০ বছরের কিশোরী মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন।  রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর পাঁচজন সন্তান জন্মেছিল, যদিও দুই সন্তান তাদের বাল্যবয়সেই মারা যায়।

বাবার আদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০-৯১ সাল থেকে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, সেইসঙ্গে পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যায় পৈত্রিক জমিদারিগুলোর তদারকি শুরু করেন। এর মধ্যে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ পরিবার নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন।

১৯০১ পর্যন্ত শিলাইদহে সময় কাটিয়েছিলেন কবি।  সেখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, ক্ষণিকা ও চৈতালির অসংখ্য কবিতা। গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদের কাজও তিনি শুরু করেছিলেন শিলাইদহে।

ওই সময় তিনি তার গল্পগুচ্ছ বইয়ের প্রায় ৫০টির মত গল্প লেখেন। এসব গল্পে তিনি মূলত গ্রাম বাংলা দারিদ্র ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছিলেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ছোট গল্প লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম ছোট গল্প ছিল 'ভিখারিনী'।

রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যান পশ্চিমবঙ্গে বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের কাছে শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন , যা কালক্রমে এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯২১ সালে।

এই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।

শান্তিনিকেতনে থাকাকালেই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ তার স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাকে হারান।

এসময় রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক লর্ড কার্জন যখন দেখলেন বাঙালিরা স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন তারা ওই আন্দোলন রুখতে সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাকে দুভাগে ভাগ করে দিতে। এর প্রতিবাদে যে রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, তার পুরোভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ব্রিটিশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলার নেতারা ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে কলম ধরে যে গানগুলো লিখেছিলেন, তা তখন এক অভিনব উন্মাদনা তৈরি করেছিল।

এরপর ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজ শাসকের প্রবর্তিত এক বিল, যার আওতায় বিনা বিচারে যে কোন লোককে আটক রাখার বিধান পাশ করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী প্রায় ২ হাজার নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে।

পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ওই মর্মান্তিক গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইংরেজ সরকারের দেয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম অ-ইউরোপীয় যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালে। তার কাব্যগ্রন্থ 'গীতাঞ্জলি'র ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাকে নোবেল পুরস্কার দিয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ছিল তার ভাবগভীরতায়। তার সাহিত্যে বিশ্বপ্রেম ও মানবপ্রেমের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা আর প্রগতিবোধ প্রকাশ পেয়েছে। কথা সাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধেও তার মতামত তুলে ধরেছিলেন।

সমাজকল্যাণ, গ্রাম উন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে তিনি সোচ্চার ছিলেন। শান্তিনিকেতনের কাছে সুরুল গ্রামে আমেরিকান কৃষি অর্থনীতিবিদ লেনার্ড এলমহার্স্ট এবং শান্তিনিকেতনের শিক্ষক ও ছাত্রদের সহযোগিতায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন শ্রীনিকেতন নামে পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিপুল সাহিত্যসম্ভারের যেসব হিসাব পাওয়া যায় সে অনুযায়ী তিনি লিখেছিলেন ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য আরও গদ্য, ৯৫টি ছোটগল্প এবং ২ হাজারের ওপর গান।

প্রায় ৭০ বছর বয়সে তিনি ছবি আঁকতে শুরু করেন। ছবি আঁকায় তার কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। লেখার কাটাকুটিকে একটা চেহারা দেবার চেষ্টা থেকে তার ছবি আঁকার শুরু। তারপরেও তিনি প্রায় ২০০০ ছবি এঁকেছিলেন।

ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় বিরাট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন কবি।

রবীন্দ্রনাথের লেখা ইংরেজি, ডাচ, জার্মান, স্প্যানিশসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছিল। তার সমসাময়িক বহু বিদেশি কবি, সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিককে তিনি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় এবং এক অর্থে বাংলার বাইরে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিল।

জীবনের শেষ চার পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে নানা অসুস্থতায় ভুগেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু লেখা তিনি কখনও থামাননি। মৃত্যুর সাতদিন আগে পর্যন্তও তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল।

দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই তার জীবনাবসান হয়।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম