সুন্দরী নারীর মাধ্যমে অর্থপাচারও করেছেন পাপিয়া

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৪:১২ পিএম

রিমান্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে চলেছেন যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। নারীদের মাধ্যমে রাজধানীর হোটেলগুলোতে যৌনবাণিজ্যের পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন পাপিয়া। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এই তথ্য দিয়েছেন এ নারী নেত্রী।
সেই তথ্যের সূত্র ধরে পাপিয়ার মাধ্যমে যেসব সুন্দরী তরুণী বিদেশ থেকে এ দেশে আসতেন এবং বিদেশ যেতেন, তাদের নামের একটি তালিকা করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। আরও কিছু তথ্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসবে। তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পাপিয়ার অপরাধগুলো সংগঠিত অপরাধ উল্লেখ করে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এর সঙ্গে আরও অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। তবে যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া স্বীকার করেছেন, নারী ব্যবসার আড়ালে মুদ্রাপাচার ছিল তার অন্যতম বাণিজ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে এসব অর্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। মানিলন্ডারিং অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নারীদের বাংলাদেশে এনে অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা করতেন পাপিয়া। গ্রাহকদের প্রয়োজনে বিদেশেও পাঠানো হতো সুন্দরী নারী। রাশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে যেসব সুন্দরী তরুণী দেশে আনতেন, তাদের মাধ্যমেও বেশ কিছু অর্থ তিনি ওইসব দেশে পাচার করেছেন। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ওইসব তরুণীর তথ্য নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন গোয়েন্দা সদস্যরা।
পাপিয়ার মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। নারী ব্যবসা, মাদকপাচার, অস্ত্র ও জালটাকার বাণিজ্যসহ অপরাধ জগতের অজানা সব কাহিনী অকপটে বলছেন পাপিয়া। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে পাপিয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া তায়্যিবা ডিবিকে জানিয়েছেন, অনেক সময় চাহিদামতো থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ভুটান ও রাশিয়া থেকে উঠতি বয়সী তরুণীদের নিয়ে আসা হতো। পার্বত্য অঞ্চল থেকেও পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে আসতেন পাপিয়া।
ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে পাপিয়া দেশ-বিদেশের উঠতি মডেলদেরও ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতেন মডেলদের। মোটা অঙ্কের লেনদেন হতো মডেলদের সঙ্গে। মডেলদের বাংলাদেশে এনে কিছু দিন রেখে আবার পাঠিয়ে দেয়া হতো। মডেলদের বিমান ভাড়া দিতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে এক মাস আগে রাশিয়ার কয়েকজন মডেলও নিয়ে এসেছিলেন পাপিয়া। এর পর ইমিগ্রেশন থেকে ওই মডেলদের আটকে দেয়া হয়। কারণ তারা বাংলাদেশে আসার নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি। এর পর শামীমা নূর পাপিয়া বিভিন্ন ক্ষমতাশালীকে দিয়ে ওই মডেলদের বের করে নিতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে র্যা বের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, পাপিয়ার বিদেশ থেকে মডেল আনার খবর আমরাও শুনেছি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আমরা কিছুই জানি না। আমরা এই মামলার তদন্তভার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তদন্তের দায়িত্ব পেলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমাদের কাছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনেছি। এর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।