আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণে নারকীয় হত্যাকাণ্ড: আদালত

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২৮ পিএম

আদালত প্রাঙ্গণে আইএসের প্রতীক সংবলিত কালো টুপি মাথায় আসামি। ছবি: যুগান্তর
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁতে জঙ্গি হামলা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে নিষ্ঠুর ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়।
বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলায় সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দিয়েছেন। জঙ্গি হামলার ঘটনার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জঙ্গি হল- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে তামিম চৌধুরীকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের নামে জননিরাপত্তা বিপন্ন ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে নারকীয় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজানে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিরপরাধ দেশি-বিদেশি মানুষ যখন রাতের খাবার খেতে যায়, তখনই হঠাৎ তাদের ওপর চালানো হয় জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা শিশুদের সামনে এ হত্যাকাণ্ড চলায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তারা নিথর দেহগুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হলি আর্টিজান বেকারি।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এটা প্রমাণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর ফলে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য পরিচিত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়। কাজেই সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আসামিরা কোনো ধরনের অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না। এক্ষেত্রে আসামিদের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(২)(অ) ধারায় প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাজাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। হতভাগ্য মানুষগুলোর স্বজনরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবেন। বিচারক বলেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী ছিল তামিম আহমেদ চৌধুরী। আসামি আসলাম হোসেন র্যাশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘আমি তামিম ভাইয়ের কাছে গুলশান বা কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাই। তামিম ভাই বলে, আমাদের সংগঠন নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কাজেই এটা প্রতিষ্ঠিত যে, তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে হলি আর্টিজানে হামলা হয়। বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা করে। হামলায় নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো চাপাতি দিয়ে ১৭ জন বিদেশি, চারজন বাংলাদেশি নাগরিক, দু’জন পুলিশ অফিসার এবং অনেককে গুরুতর আহত ও জিম্মি করা হয়।