ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে মোবাইল টাওয়ার অপসারণ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:২৫ এএম
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাসহ সব স্পর্শকাতর এলাকা তথা হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ থেকে মোবাইল টাওয়ার দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত রায় প্রদানকারী বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা একটি রিটে মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের সেই আদেশ অনুযায়ী মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তা (রেডিয়েশন) খুবই উচ্চমাত্রার এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মর্মে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই প্রতিবেদনে সব মোবাইল অপারেটর এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে (বিটিআরসি) এই তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কমাতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও সুপারিশ করা হলে বিজ্ঞানী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত।
পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এর পর সেই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ বছরের ২৫ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ১১ দফা নির্দেশনা দেন আদালত।
একই সঙ্গে সমীক্ষা করে দেশের টাওয়ারগুলোর ক্ষতিকর রেডিয়েশনের বিষয়ে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালতের দেয়া সেই ১১ দফা নির্দেশনা হলো- ১. মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১/১০ ভাগ করা।
২. মোবাইল টাওয়ার বাসার ছাদ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কারাগার, খেলার মাঠ, জনবসতি এলাকা, হেরিটেজ ও প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাসহ ইত্যাদি স্থানে না বসানো এবং যেগুলো বসানো হয়েছে তা অপসারণ।
৩. বিকিরণের মাত্রা যেন বেশি না হয়, তার ব্যাপারে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ।
৪. টাওয়ার বসাতে জমি অধিগ্রহণে কোনো বাধা আছে কিনা বা বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ।
৫. টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা বিটিআরসি ও লাইসেন্সিং দুপক্ষকেই স্বাধীনভাবে আইটিইউ এবং আইইসি এর মান অনুসারে পরিমাপ করা।
৬. কোনো টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা বেশি হলে তা অপসারণ করে নতুন টাওয়ার বসানো।
৭. টাওয়ার ভেরিফিকেশন মনিটর পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিটিআরসির দায়দায়িত্ব হবে বাধ্যতামূলক।
৮. বিটিআরসি স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করবে।
৯. বিটিআরসি অন্যদের নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করবে। লাইসেন্সিংকে প্রতি ছয় মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
১০. মোবাইল সেটে দৃশ্যমানভাবে এসএআর মান লিখতে হবে এবং
১১. সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সি প্রতিটি রিপোর্ট/রেকর্ড ৫ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আজ সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাসহ সব স্পর্শকাতর এলাকায় মোবাইল টাওয়ার দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রায় প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গবেষণা করে জানায়, দেশে ব্যবহৃত টাওয়ারে নিঃসৃত বিকিরণ আন্তর্জাতিক মাত্রার তুলনার বেশি। এর পর এ নিয়ে একটি গাইডলাইন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে অনুসারে বিটিআরসি একটি গাইডলাইন করে আদালতে দাখিল করেছিল। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত পাঁচবারের চেষ্টায় সেই গাইড লাইন সংশোধন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলার শুনানিতে আমরা ভারতের দুটি রায় আদালতে দাখিল করেছি। সেখানে আমরা বলেছি, আমাদের দেশের টাওয়ারের রেডিয়েশনে যে মাত্রা রয়েছে, তা ১০ ভাগের একভাগে কমিয়ে আনতে হবে।’