Logo
Logo
×

জাতীয়

বিনাদোষে জাহালমের সাজাভোগ: দুদকের ১১ কর্মকর্তা নিয়ে শুনানি আজ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০১৯, ০৩:০০ এএম

বিনাদোষে জাহালমের সাজাভোগ: দুদকের ১১ কর্মকর্তা নিয়ে শুনানি আজ

বিনা অপরাধে জাহালমের সাজাভোগ করার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার ১১ তদন্ত কর্মকর্তার নাম কী, তাদের বিরুদ্ধে কী কারণে বিভাগীয় মামলা হয়েছে -এসব বিষয়ে হাইকোর্টে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার দুপুর ২টার পর এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

দুদকের ভুলে নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালমের বিরুদ্ধে করা ৩৩ মামলার ১১ তদন্ত কর্মকর্তার নামের তালিকাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। কী কারণে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

২১ আগস্ট মামলার বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর হাইকোর্টের বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

 সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। মামলা ও পরবর্তী সময়ে ২৬টি মামলার চার্জশিটে সালেকের নাম ব্যবহার করা হলেও জাহালমকে সালেক নামে গ্রেফতার করা হয়।

এর পর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়। অথচ জাহালম তাদের বাড়ি থাকেন না। তিনি কাজ করেন নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে।

মামলার চার্জশিট হওয়ার পর জাহালমের বিরুদ্ধে আদালত থেকে তিন বছর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক।

অনুসন্ধানকালে জাহালম দুদককে বলেছিলেন, তিনি আবু সালেক নন। সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও তার নয়। কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালে জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন।

পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা কানে তোলেননি। এমনকি দুদকের পিপিরাও বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা করেননি। যে আদালতে বিচার চলছে, সেই আদালতের বিচারকও বিষয়টি ভালোভাবে বিবেচনায় নিলে জাহালমকে বিনাকারণে তিন বছর জেলে থাকতে হতো না।

শেষ পর্যন্ত কারও কাছে সমাধান না পেয়ে জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া গত বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন। তার আবেদনে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম এক ব্যক্তি নন।

এ নিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন একজন আইনজীবী। পরে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ জাহালমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তির আদেশ দেন।

আদেশের আগে একপর্যায়ে বিচারক বলেন, দুদক যদি প্রোপারলি কাজ না করে তা হলে আমাদের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার স্থায়িত্ব থাকবে না। দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না, আমাদের ভিক্ষা করতে বসতে হবে।

বিচারক বলেন, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না। এই ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।

এ মামলায় যে তদন্তকারীরা জাহালমের নামে ভুলভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধ দুদক কী ব্যবস্থা নিয়েছে তাও জানতে চান আদালত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম