দেশে আইনের শাসন না থাকায় এত ভোগান্তি: ড. মিজানুর রহমান

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম

আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। ছবি-যুগান্তর
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই ঈদ যাত্রায় সাধারণ নাগরিক যেসব ভোগান্তির শিকার হয়, তা রোধে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া জনগণের জন্য কোনো দয়া নয়, এটি জনগণের নাগরিক অধিকার।
বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ‘ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ : আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
ট্রেনের টিকিট নিয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, জনগণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছে না, কাউন্টার থেকে বলা হয় টিকিট শেষ। কিন্তু টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখা যাচ্ছে ২৩ হাজার টিকিট এখনও অবিক্রীত। অন্যদিকে নতুন সংযোজন মোবাইলভিত্তিক অ্যাপসেও টিকিট কাটতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে নাগরিকরা। এই জবাবদিহিতা কার কাছে পাওয়া যাবে?
তিনি আরও বলেন, যেভাবে প্রতিদিন বন্দুকযুদ্ধ চলছে সেখানে আদালতের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতার জায়গায় আমরা একটা দুর্বল অবস্থানে আছি। এখানে জবাবদিহিতা একদম নেই। কারণ আইনের শাসন একদম প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ন্যূনতম আইনের শাসন নিশ্চিত করা না গেলে নাগরিকদের নিরাপত্তা থাকে না।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন বলেছেন, প্রধান সড়কে নসিমন, করিমন শতভাগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ, ছোট ছোট যাতায়াত মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুটি সেতু উদ্বোধন হওয়া ও টাঙ্গাইল মহসড়াকে ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রা আগের চেয়ে স্বস্তির হবে। ঈদ যাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি।
বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, যদি পরিবারকে আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া যায়, তবে ঈদযাত্রায় অনেকটা স্বস্তি মিলবে। কারণ সবাই যখন একসঙ্গে বাড়িতে যেতে চায় তখন আর স্বস্তির কোনো সুযোগ থাকে না।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, সরকারকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আগামী পাঁচ বছরে কী পরিমাণ গাড়ি দেশে চলবে। সে অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। নতুন একটি ঢাকার জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকায় যেন আর একটাও নতুন বিল্ডিং না উঠতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যানজটের কারণে যাত্রীবাহী বাসগুলো কাক্সিক্ষত সংখ্যক টিপ দিতে না পেরে, তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়। যার ফলে প্রতিবছর ঈদ যাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা না গেলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়িতে লোকজনের যাতায়াত কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না।
তিনি দেশের সবগুলো সড়ক মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, এবার ঈদযাত্রায় চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা বেশ স্বস্তি পাবেন। তবে ভোগান্তিতে পড়তে হবে সিলেটগামী যাত্রীদের। কারণ সিলেট মহাসড়কের অবস্থা নাজুক।
গোলটেবিল বৈঠকে বিআরটিএ’র রোড সেফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানি এবং গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।