
পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে আত্মসমর্পণ করলেন চরমপন্থীরা
সন্ত্রাসী পেশা ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি-এই প্রত্যয় নিয়ে পাবনায় ১৪ জেলার ৫৯৫ চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনষ্ঠানে এসব চরমপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এ সময় তারা ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫৭৫টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেন।
চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণের জন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াছমিন জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।
চরমপন্থীদের পক্ষ থেকে রাজশাহীর বাগমারার আবদুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু এবং চরমপন্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ ইকবালে স্ত্রী মিসেস রত্না বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা), সর্বহারা, নিউ বিপ্লবী ও কাদামাটির অনুসারী ৫৯৫ জন চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেন। তাদের মধ্যে নওগাঁ জেলার ৭০, জয়পুরহাট ৮২, রাজশাহী ৬০, সিরাজগঞ্জ ৬৯, নাটোর ২৭, বগুড়া ১৫, ফরিদপুর ২৭, রাজবাড়ি ৩৪, খুলনা ৩৫, সাতক্ষীরা ৬, নড়াইল ২, যশোর ২, টাঙ্গাইল ৩১, পাবনা জেলা থেকে ১৩২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে নেতা ১৬, ওয়ারেন্টভুক্ত ৩৪ রয়েছেন।
এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র ৬৮ এবং দেশীয় অস্ত্র ৫৭৫টি জমা দেন চরমপন্থীরা। যারা আত্মসমর্পণ করেন তাদের পক্ষ থেকে নেতাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, ইউসুফ আলী ফকির ওরফে মিন্টু ফকির, সিরাজ শিকদার, মনসুর আলী, আবু তালেব, আব্দুল আলিম, বাবলু ব্যাপারী, ইকবাল হোসেন, আবদুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু, আতাউর রহমান, মহসিন আলী, মোবারক হোসেন, মহসিন মল্লিক, ফারুক মোল্লা, আবদুল্লাহ আল মামুন, লিপু মোল্লা, রমজান আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
এ সময় তাদেরকে আর্থিক সুবিধা ও উপঢৌকন দেয়া হয়। কিন্তু কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ ২০ বছর পর দ্বিতীয় দফায় দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ জেলার এসব চরমপন্থী নেতাকর্মী এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেন।
পাবনা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের সব প্রস্ততি নেয়া হয়। সোমবার রাতেই চরমপন্থীদের নিজ নিজ জেলা থেকে পাবনায় নিয়ে আসা হয় এবং মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে তাদেরকে পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে নির্ধারিত জায়গায় বসানো হয়।
আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে পাবনা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমা আক্তার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে চরমপন্থীদের হাতে ২৮৭ জন নিহত হন।
এদিকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সফল করতে এক সপ্তাহ ধরে পাবনা শহরের মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপুর্ণ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনসহ জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অনুষ্ঠানকে সফল করাসহ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাবনা শহরের এবং আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।