যুক্তরাষ্ট্র কেন সতর্ক বার্তা দিল তা বুঝতে পারলাম না: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪১ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঝড়ঝাপটা ও নানা দুর্যোগের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সতর্ক বার্তা জানিয়েছে, কিন্তু কেন তারা এ ধরনের সতর্ক বার্তা দিল তা বুঝতে পারলাম না। এ ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি যদি থেকেই থাকে তাহলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করলেই পারত।
শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে তিনি একথা বলেন। বৈঠকের শুরুতেই অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শোক প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাব পেশ করেন আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলের ওপর নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়। বলা হয়, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলার ‘প্রতিশোধের আহ্বানের আলোকে’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আইএস ও আল-কায়েদার মতো আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিদ্যমান হুমকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
‘বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, তাদের সহযোগী এবং এসব সংগঠনের দ্বারা উদ্বুদ্ধরা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর হামলা করতে চায়।’ উগ্রপন্থীরা অনলাইনে অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি পশ্চিমা স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর মতো প্রতিষ্ঠানে হামলার আহ্বান রাখছে বলে দাবি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু হঠাৎ করে আগুন লাগার কারণেই কি এই সতর্কবার্তা?
আমেরিকাতে একটা সার কারখানা থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবই পুড়ে শেষ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কতজন মারা গেছে সেই খবর কেউ জানেও না। এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনে আগুন লেগে ৭০ জন মারা গেল। আরও যে কত লোক মারা গেছে সেটার হিসাবও নেই। সেখানে হিসাবও হয় না। উদ্ধার কাজও আমাদের মতো এতদিন কেউ চালায় না।’
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, এটি সারা বিশ্বেরই সমস্যা। একটি ঘটনা ঘটলে তার প্রভাবও সারা বিশ্বে পড়ে। তাই আমেরিকার কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইন্টেলিজেন্স ও প্রশাসন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের সহায়তায় আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত করেছি।
অগ্নিকাণ্ডের স্থানে সেলফি তোলার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে কিছু মানুষ অযথাই ভিড় করে। অনেকে সেখানে যান, সেলফি তোলেন। আগুন নেভানোর কাজ না করে সেলফি তোলায় যে কী আনন্দ তা আমি বুঝি না! তা না করে সবাই এক বালতি করে পানি আনুক, আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণে যায়, তখনও কিছু লোক সেখানে ভিড় করেন, তাদের মারতে যান। বনানীর আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত ভাঙা হয়েছে। একেকটা গাড়ির দাম আট থেকে দশ কোটি টাকা। যারা উদ্ধার করতে যান তাদের বাধা দেয়া ও মারা এটা কেমন কথা?’
সম্প্রতি কয়েকটি আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছু লোকের দায়িত্ববোধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। ইউনিভার্সিটির ছেলেরা এসেছিল, পরে তাদের বললাম ভলান্টিয়ার হয়ে কাজ করতে। তবে কিছু মানুষ অযথা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গাটা খালি রাখলেও উদ্ধারকারীদের জন্য কাজ সহজ হয়।’
বনানী এখন বিএনপি পল্লী হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আগে বনানীতে অনেক খাল, পুকুর ছিল। তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর ভরাট করে প্লট বানিয়েছে। জিয়া এবং এরশাদের আমলে গুলশান লেক ভরাট করে অর্ধেক বানিয়ে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। যারাই ভবন নির্মাণ করবেন তারা আগুনের বিষয়, জরুরি এক্সিট গেট রাখার বিষয়গুলো মাথায় রেখে নির্মাণ করবেন।’
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আয়-বৈষম্য কমিয়ে এনে উন্নয়নের ছোঁয়া যেন আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়, আমরা সেই কাজগুলো করে যাচ্ছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, এগুলো শেষ হলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না।’
দেশ উন্নত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ স্বাধীনতার অর্ধশত বার্ষিকীতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ২০৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীতে যারা থাকবেন তারা উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ পাবেন। এজন্য ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছি আমরা।’
পরিকল্পিত কাজ করে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছি : শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পিত কাজ করে জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করেছি। দেশে শান্তি ফিরিয়েছি। মানুষ নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারেন। উন্নয়নের জোয়ার লেগেছে। সেই আস্থা আর বিশ্বাস থেকেই আওয়ামী লীগ এবারও সরকার গঠন করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার আগে দেশে ছিল অর্থনৈতিক মন্দা। দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। তাদের অপকর্মে দেশটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছিল। শান্তিতে চলাফেরা করতে পারত না মানুষ। চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিস্তার হয়েছিল। আয়ের তুলনায় ব্যয় ছিল বেশি। যে কারণে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল দেশের শীর্ষ পাঁচে থেকে আমরা কথা বলছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এখন। প্রবৃদ্ধিতে অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছি। আগামীতে ৮-এর বেশি প্রবৃদ্ধি হবে আমাদের। সেভাবেই আমরা পরিচালনা করছি।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘বিএনপি আমলে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে বাড়িঘরে থাকতে পারেননি নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। নগদ টাকাসহ সম্পদ লুট করে নিয়েছিল। মিথ্যা মামলায় আমাদের জর্জরিত করতে চেয়েছিল। আমাদের দলীয় কার্যক্রমের কোনো সুযোগই ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন জরিপ বলেছিল, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসছে। আমাদেরও বিশ্বাস ছিল জনগণ আমাদের চায়। সে বিশ্বাস আমরা বাস্তবে দেখেছি। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জেল থেকে খালেদা জিয়া একজনকে নির্বাচনে নমিনেশন দিলেও লন্ডনে থেকে আরেকজনকে নির্বাচন করতে বলা হয়। ফলে নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে।’
১০০টি শিল্পাঞ্চল হলে কেউ বেকার থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল করছি তাতে সোয়া কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ফলে কোনো লোক বেকার থাকবে না, বেকার থাকার কথা না।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত। এবার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ ভাগের বেশি হবে। উন্নয়নের দিক থেকে আমরা গ্রামকে প্রাধান্য দিয়েছি। গ্রাম এবং শহরের বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রামের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ল্যাট্রিন ছাড়া থাকবে না। হতদরিদ্র থাকবে না। এমনকি দেশে কোনো ভিক্ষুকও থাকবে না।’