ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে বাংলাদেশে কি কোনো প্রভাব পড়বে? ছবি: সংগৃহীত
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ চলছে। দেশ দুটির মধ্যে কাশ্মীরের পুলওয়ামার আত্মঘাতী হামলার পর থেকে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বাংলাদেশ কোন দিকে থাকতে পারে? এমন বিষয়টি সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে ভারত পাকিস্তানে হামলার পরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক দেশকে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর বড় দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে সব সরকার কমবেশি কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। সেই তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিভিন্ন সময়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এ অবস্থায় ভারত ও পাকিস্তান এই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছে তখন বাংলাদেশের ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশকে বাইরের বিশ্বের মানুষ তো দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে দেশ হিসেবে দেখছে না।
তিনি বলেন, তাই দক্ষিণ এশিয়ায় যখন উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তখন তারা (বহির্বিশ্ব) বাংলাদেশকে তার মধ্যেই দেখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়।
হুমায়ুন কবির বলেন, অবশ্যই আমরা বিনিয়োগের কথা ভাবি, ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা ভাবি, বাইরে লোক পাঠানোর কথা বলি- এসব বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কূটনৈতিকভাবে এটা একটা বড় জায়গা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের যেটির সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেটি হলো ভারত।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপর কোনো লাভ বা ক্ষতির আশঙ্কা আছে কী?
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আপাতত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু না হলেও সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাণিজ্যিক যেসব সুযোগ-সুবিধার পেতে পারত সেটা এই চলমান উত্তেজনা একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করল বাংলাদেশের জন্য।
তিনি বলছেন, পাকিস্তান এবং ভারত উভয় সার্কভুক্ত দেশের সদস্য। আবার সার্ককে কার্যকর করার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
সার্কের সদস্য হিসেবে নানা রকম অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, সেখানে সব সময় ভারত এবং পাকিস্তানের ইস্যু এক ধরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, এই নতুন উত্তেজনার ফলে সার্কভুক্ত দেশগুলো অর্থনৈতিক যে সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারত, সেটাকে আরও পিছিয়ে দিল বা একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করল।
তবে পুলওয়ামা হামলা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ সরকার নিন্দা জানিয়েছে।
সেটা ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রোকসানা কিবরিয়া বলেন, এটা দ্বারা ভারতকে সমর্থন করছে এটা সরাসরি বলা যাবে না।
তিনি বলেন, আবার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগে থেকেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশে এখন পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ কোনো রাষ্ট্রদূত নেই।
এনিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, চলমান উত্তেজনা, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ওপর কতটা প্রভাব পরবে সেটা বোঝা যাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া কী সেটা দেখা।
পুলওয়ামা হামলায় বাংলাদেশে নিন্দা জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা হলো একটা নীতিগত অবস্থান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এখন বাংলাদেশ যেখানে, যে প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী জঙ্গিবাদের শিকার হয়েছে সেখানেই নিন্দা জানিয়েছে।
এখন কে জঙ্গিবাদের শিকার হলো এবং কে শিকার করল- সেটা কিন্তু আলাদা প্রশ্ন। এখানে কিন্তু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে প্রিন্সিপাল বা নীতিগত অবস্থান সেটাই ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
তবে এনিয়ে অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, একেবারে ক্ষতির দিক চিন্তা না করে এর উল্টোটাও হতে পারে।
যদি উত্তেজনা বাড়তে থাকে তাহলে ভারত-পাকিস্তান যে পণ্যগুলো উভয় দেশ থেকে আমদানি করত, সেসব পণ্য পাশের দেশে হিসেবে বাংলাদেশ থেকে নিতে পারে এমন সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।