Logo
Logo
×

জাতীয়

সুন্দর করে ছবি তোলেন: রায়ের পর এমপিপুত্রের তাচ্ছিল্য

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৩৬ এএম

সুন্দর করে ছবি তোলেন: রায়ের পর এমপিপুত্রের তাচ্ছিল্য

আদালতে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি। ছবি: যুগান্তর

রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলার রায়ের সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি বিচিত্র ও অদ্ভুত আচরণ করেছেন।

এ সময় কখনও তার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি, কখনও বিমর্ষ এবং কখনও উৎসুক অবস্থায় দেখা গেছে তাকে। 

বুধবার রনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম।

রায় ঘোষণার আগে রনিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। 

তবে এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও সিএনজি অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলীর পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।

আদালতের কাঠগড়ার গরাদে পা রেখে উঁচু হয়ে মনোযোগ দিয়ে রায় শুনতে দেখা যায় আসামি রনিকে। এর পর আদালতের বারান্দায় ছবি তুলতে থাকা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ছবির জন্য পোজ তো দিলাম, আর কত!

নিচতলার হাজতখানা থেকে দোতলায় তোলার সময় সাংবাদিকদের ছবি তোলা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন রনি। একবার তিনি বলেন, …পোজ দিই?

সাংবাদিকরা আরও ছবি নিতে থাকলে তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে রনি বলেন, তোলেন তোলেন, সুন্দর করে তোলেন।

দোতলায় উঠে যাওয়ার সময় তাকে বলতে শোনা যায়, হয় নাই? আরও তোলেন। যাওয়ার সময়ও সুন্দর করে তুইলেন।

অন্য একটি মামলার শুনানি শেষ করে পৌনে ৩টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম।

একপর্যায়ে গরাদে পা রেখে হাতে ভর দিয়ে অনেকটা উঁচু হয়ে রায় শুনতে দেখা যায় সাবেক সাংসদপুত্রকে।

রনির রায় পড়তে ১০ মিনিটের মতো সময় নেন বিচারক। এর পর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন।

পুলিশ সদস্যরা আসামিকে কারাগারে নিয়ে যেতে কাঠগড়ার সামনে এলে তাদের কাছে দুই মিনিট সময় চান রনি।

তিনি বলতে থাকেন, দুইটা মিনিট পরে বের করেন। আমি একটা জিনিস জেনে যাব। একজন পুলিশ সদস্য তখন বলেন, পরে জানতে পারবেন, এখন চলেন।

আদালত ভবনের নিচতলার হাজতখানার দিকে যাওয়ার পথে সাংবাদিকরা যাতে ছবি তোলার সুযোগ পান, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের নিয়ে থামেন রনি।

এ সময়ও তার মুখে ছিল তাচ্ছিল্যের হাসি। হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা আরও ছবি তুলতে থাকেন। তখন তিনি বলেন, …আর কত!

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামি রনির হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ার ব্যাপারে আদালত নিশ্চিত হয়েছেন। গুলি ছোড়ার কারণে দুটি প্রাণ ঝরে গেছে।

আসামি জানতেন পিস্তল থেকে গুলি করা হলে আর তা মানুষের শরীরে লাগলে প্রাণহানি ঘটতে পারে। তিনি এর (হত্যা) দায় এড়াতে পারেন না। তবে তার ‘মানসিক ও শারীরিক অবস্থা’ বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।

আদালত বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- ঘটনার দিন রনি মদ্যপ অবস্থায় অস্বাভাবিক ছিলেন। তার শিশুসন্তান হাসপাতালে ভর্তি ছিল। রাতে রনিকে নিয়ে তার মাইক্রোবাস মগবাজারের দিকে যায় এবং এর ১০ মিনিটের মাথায় উল্টো পথ দিয়ে আবার ইস্কাটনের দিকে আসে। এ সময় তার সঙ্গে পিস্তল ছিল।

রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির, ওই রাতে রনির সঙ্গে থাকা কামাল মাহমুদ, টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর আলম ১৬৪ ধারায় আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

তাদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রনি তার পিস্তল দিয়েই গুলি ছুড়েছেন। তার গুলিতে রিকশাচালক হাকিম ও সিএনজি অটোরিকশাচালক ইয়াকুব গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন।

রায়ে আরও বলা হয়, রনি যে পিস্তল ব্যবহার করেছেন তার লাইসেন্স ছিল কিনা তার মূল কপি আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। কতটি গুলি তিনি ব্যবহার করতে পারবেন সেই হিসাবের বিবরণও আদালতে দেয়া হয়নি। তবে পুলিশ তার কাছ থেকে ২১টি গুলি উদ্ধার করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তারা মারা যান।

ওই ঘটনায় ১৫ এপ্রিল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ৩০ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে রনিকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম