সব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
বিডিনিউজ
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৭ এএম
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে সব বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বুধবার সংসদে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও দলমত নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ।
প্রতিবারের মতো এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি।
সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানায়।
সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান মো. আবদুল হামিদ।
ভাষণে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে ২০৪১ সালে। এর মধ্যে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণ এবং সমাজের সব স্তরে প্রত্যক্ষ জনসম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব।
ভাষণে সংসদকে কার্যকর করতে সম্মিলিত উদ্যোগের আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। জনগণের এ রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।
দলমতের পার্থক্য ভুলে সবাইকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, কর্মচঞ্চল, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সবার কাম্য। ইতিহাসের সাহসী সন্তানরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।