জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমার যে পথে হাঁটছে তা আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত (র্যাপোর্টিয়ার) অধ্যাপক ইয়াংহি লি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে না মিয়ানমার সরকার। তারা বলছে, রোহিঙ্গারা তাদের দেশের নয়, তারা মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
তিনি বলেন, মিয়ানমার এমন একটি দেশ যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিচারিক এবং অবিচারিক কোনো ক্ষেত্রেই মানবাধিকারের লেশমাত্র নেই। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাংবাদিকরাও সেখানে নিরাপদ নয়।
মানবাধিকার বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যর্পণের আগে দায়ীদের বিচার হওয়া প্রয়োজন ছিল।
রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনার কারণে দেশটিতে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তিনি থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফর করছেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার যে পথে হাঁটছে তা আশঙ্কাজনক। ৬০, ৭০ বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পরে তাদের বিশ্বে আত্মপ্রকাশের একটা বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা এখন অন্ধকারের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। এটা বড় হতাশাজনক।
এক প্রশ্নের জবাবে লি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ১৭ মাস মোটেই কম সময় নয়, কিন্তু এ সময়ে নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। চীন ও রাশিয়ার অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা এটাকে মিয়ানমারের জাতিগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মিয়ানমার সফরে নিষেধাজ্ঞার পর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে এবার শুধু বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। তিনি সাত দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর এক বছরের মধ্যে এটি ঢাকায় তার দ্বিতীয় সফর।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ।
আর তার আগে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।