নবাবগঞ্জে গণসংযোগকালে সালমা ইসলাম
দোহার-নবাবগঞ্জকে মডেল উপজেলা হিসাবে গড়তে চাই
ইমন রহমান ও আজহারুল হক, নবাবগঞ্জ থেকে
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৫ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দোহার-নবাবগঞ্জবাসীকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
এলাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে চলে যাবেন। ২ ঘণ্টার মধ্যে দলে দলে গিয়ে ভোট দেওয়ার কাজ শেষ করবেন। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। কেউ ভয় পাবেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন ভোট নিরপেক্ষ হবে। পরিবারের সব সদস্য মিলে লাঙ্গলে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে নির্বাচিত করলে এবার দোহার-নবাবগঞ্জকে মডেল উপজেলা হিসাবে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
শনিবার নবাবগঞ্জের আগলা ও গালিমপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি প্রচারণায় ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কয়েকটি উঠান বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের বিপদাপদে পাশে থাকায় সালমা ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়া গ্রামের হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে এক সমাবেশে সালমা ইসলাম বলেন, আমরা তো সব নবাবগঞ্জের, বারবার ভুল কেন করেন। আবারও কি আপনারা দোহারে চলে যাবেন। এ সময় সবাই উচ্চৈঃস্বরে বলেন না না।
সালমা ইসলাম বলেন, একথাটা ঘরে ঘরে জিকির তোলেন। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। ভাগ্যের পরিবর্তন না করলে আবার ৫টা বছর আমরা পিছিয়ে যাব। তিনি বলেন, ভোটের আগে কিছু করলে ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যাব। আমি ভোটের পরে আপনাদের সবার কথা রাখব ইনশাআলাহ।
সালমা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন দেবেন। পৃথিবী এজন্য তাকিয়ে আছে। নির্বাচনের সময় অনেক নতুন নতুন চেহারার লোক দেখবেন। আপনারা চিনতে পারবেন না। বাইরে থেকে লোক আসবে পর্যবেক্ষণ করতে। আপনারা এই দেশের নাগরিক, আপনাদের অধিকার আছে ভোট দেওয়ার। সঠিক ভোট সঠিক জায়গাতে দেবেন। কোনো ভয় করবেন না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ভোটের শেষ মুহূর্তটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল লিখিত সিলছাপ্পর নিয়ে আসবেন। ইনশাআল্লাহ এবার আমি বিজয়ী হব।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনগণের সেবা করা। যদি আমরা এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করতে পারি, তাহলে আমাদের রাজনীতি করার কোনো সার্থকতা থাকবে না। জনগণের সেবা, উন্নয়ন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির মূল লক্ষ্য।
এসময় তিনি বিভিন্ন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান ও তাদের বিভিন্ন ধরনের খোঁজখবর নেন। সালমা ইসলাম এদিন উপজেলা আগলা বাজারসহ আগলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তার নির্বাচনি প্রচারের লিফলেট বিতরণ করেন ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গণসংযোগকালে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন।
তিনি বলেন, আমিও আপনাদের মতো মানুষ। বিগত সময়ে এই অঞ্চলের এমপি থাকা অবস্থায় আমার ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমার ভুল কতখানি আর মানুষের সেবা ও উন্নয়ন কতখানি করেছি- এ দুইটা দিক বিবেচনা করে আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার সময়ে সেবা, সুশাসন এবং উন্নয়ন বেশি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেবেন। যাতে পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই। আপনাদের ভোটে বিজয়ী হলে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাকে একটি আধুনিক, গণমুখী ও সেবাবান্ধব উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।
গণসংযোগকালে আগলা পূর্বপাড়া এলাকার ভোটার আবুল কাশেম অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির কাছে জানতে চান, নির্বাচিত হলে এ অঞ্চলের উন্নয়নে কি করবেন- এর উত্তরে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সালমা ইসলাম বলেন, অবহেলিত দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা যাতে দেশের অন্য দৃষ্টিনন্দন উপজেলাগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করতে চাই। গ্র্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং সড়ক নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাদকমুক্ত একটি আধুনিক, গণমুখী ও সেবাবন্ধব উপজেলা গড়ে তুলতে চাই। এসময় এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার ভোট আমি দেব। কিন্তু বিগত সময়ে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, এবারও যদি হয়? এমন প্রশ্নে সালমা ইসলাম বলেন, ভোট আপনার নাগরিক অধিকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে ওয়াদা করেছেন। এবারের ভোট হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। আপনারা কারও ভয়ে আতঙ্কিত হবেন না। আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা রক্ষায় আপনারা অবশ্যই ৭ জানুয়ারি ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। অবশ্যই সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে।
এদিন বিকালে সালমা ইসলাম নবাবগঞ্জের গালিমপুরসহ নবাবগঞ্জের বাগমারা বাজার ও কোর্ট বিল্ডিং প্রাঙ্গণে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম করোনা মহামারিতে আপনাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল আধুনিক ও উন্নত দোহার-নবাবগঞ্জ গড়ার। আমি চাই তার সেই উন্নয়নের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করতে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে যাতে শহরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। এ জনপদে এখনো অনেক সমস্যা। বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা, রাস্তাঘাট সংস্কার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারি বরাদ্দের শতভাগ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে এ দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। এ সময় তিনি সবার কাছে দোয়া চান ও লাঙ্গল প্রতীককে বিজয়ী করতে কাজ করার আহ্বান জানান।
গালিমপুর ইউনিয়নের নোয়াদা গ্রামে এক সভায় সালমা ইসলাম বলেন, ১৫টি বছর ধরে আমি দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করছি। পদ্মা নদীর ভাঙনে দোহার বিলীন হয়ে যেত। বাড়িঘর সব ভাসিয়ে নিয়ে যেত। সব শেষ হয়ে যেত। ভাঙনের ফলে খোলা আসমানের নিচে যারা ঘর করেছিলের তাদের এই কষ্ট দেখে আমি পদ্মার ভাঙন রোধ করার জন্য সংসদে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে স্পিকারের কাছে দাবি তুলে ধরেছিলাম। সেখানে আমি ২১৭ কোটি টাকা এনে দিয়েছি। ভাঙন রোধে এখনো কিছুটা কাজ বাকি আছে। আমি যদি আবার নির্বাচিত হতে পারি আপনাদের কথা দিলাম, অসম্পূর্ণ কাজটা আমি শেষ করব।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সালমা ইসলাম : নির্বাচনের প্রচারণার এ পর্যায়ে পরিবেশ কেমন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সালমা ইসলাম বলেন, এখনো অনেক সুন্দর ও ভালো পরিবেশ আছে। আমরা আশা করব, সামনের দিনগুলো যেন এমন পাই।
নির্বাচিত হলে প্রথমেই আপনার কোন প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাব এখানে। আমি গ্যাসলাইন এনে দেওয়ার জন্য কাজ করব। ঘরে ঘরে প্রত্যেকে গ্যাসের চুলাটা পাবেন।
নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থানে আপনার কি পরিকল্পনা আছে- জানতে চাইলে সালমা ইসলাম বলেন, যেহেতু বিদ্যুতের অভাব, গ্যাস নেই, এ কারণে আমরা কলকারখানাগুলো করতে পারি না। এখানে আমাদের অনেক নিজস্ব জায়গা আছে। এলাকায় একটি হাসপাতাল করার ইচ্ছা আছে। আমরা সবকিছু প্রায় প্রস্তুত করছি। হাসপাতালটা হলে নবাবগঞ্জ-দোহারের মানুষের অনেক উপকার হবে।
গণসংযোগে সালমা ইসলামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান খান তাপস, মো. মহসিন. মো. ফরিদসহ আগলা, গালিমপুর ,বাহ্রা ও কলাকোপা ইউনিয়নের মহিলা পার্টি, যুবসংহতি, ছাত্র সমাজ, কৃষক পার্টির জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।