জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বৈষম্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যের কারণে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করা যায় না। এমনকি শোনা যাচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক বদলি ও নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের শাসন চাই। আমরা ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা চাই। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও দুঃশাসনে দেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষের সম্মান, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বৈষম্যের কারণে একটি অসম রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে। এমন একটি দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। মানুষে-মানুষের বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপি এতে সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ। 

বক্তব্য দেন নুরুন্নাহার বেগম, খন্দকার দেলোয়ার জালালী, মো. হাবিবুল্লাহ ফকির, রাজিব কান্তি গুহ, জিএম রাজু, চম্পা মন্ডল, হিমেল, মোস্তফা জামান বাবু, ফয়েজ মুন্না, মাহমুদা আমির শিল্পী, পংকজ দাস, মনোয়ার-ই-খোদা চৌধুরী (মন্টি) প্রমুখ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসার মান ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এখন বিদ্যালয়গুলোয় বড় বড় ভবন হচ্ছে, আধুনিক ল্যাব হচ্ছে; কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা নেই। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। জিপিএ বাড়ছে, সার্টিফিকেট বাড়ছে; কিন্তু সঠিক শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার মান বাড়ছে না। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পদক্ষেপ নেই। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আবার বেসরকারি পর্যায়ে উন্নত মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, যেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয় না। তাই বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে সন্তানের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, বড় বড় ভবনের সঙ্গে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ছে; কিন্তু চিকিৎসাসেবার মান বাড়ছে না। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন হচ্ছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে না। বেসরকারি পর্যায়ে আধুনিক সুবিধাদিসহ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সেখানে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই দেশের বেশির ভাগ মানুষ মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা পাচ্ছে না। বৈষম্যের কারণে দেশে শোষক ও শোষিত শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে। 

সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন, টাকা পাচার, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজি উপহার দিয়েছে। দেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে; কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হচ্ছে না। শতকোটি টাকা ব্যয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে; কিন্তু এই টাকায় প্রতিটি উপজেলায় স্পেশালাইজড হাসপাতাল তৈরি হলে দেশের মানুষ বেশি উপকৃত হতো। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে শেরিফা কাদের এমপি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে সাংস্কৃতিক পার্টির নেতাকর্মীরা ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে। ইতিহাসের প্রতিটি বিপ্লব ও আন্দোলন-সংগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মীরা অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। তাই জাতির প্রতিটি প্রয়োজনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। আমরা গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করছি।