
প্রিন্ট: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৫ এএম
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবিতে একাট্টা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:০৮ এএম

আরও পড়ুন
সংস্কারের জন্য সরকারকে সময় দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত থাকলেও ভোটের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবিতে একাট্টা বিএনপিসহ দলগুলো। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কবে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সে বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা চায় তারা।সেই আলোকে নির্বাচন কমিশনের সব ধরনের প্রস্তুতিও শুরু করা দরকার বলে মনে করে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য নিতে পারছেন না রাজনৈতিক নেতারা। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, সংস্কার শেষ করে ভোট করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। অথচ এতোদিন সরকার বলে আসছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হবে।
সরকারের এ ধরনের বিক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্যালোচনা করে দলগুলো মনে করছে, সংস্কারের দোহাই দিয়ে পর্দার আড়ালে প্রকারান্তরে নির্বাচন পেছানোর সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র চলছে। দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতেই হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান তারা। তা না হলে এপ্রিলের শেষদিকে রাজপথে নামার কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি ও তার মিত্রদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপিসহ ৫২টি (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে একমত হয়েছে।
দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন মাত্র। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কি ধরনের সংস্কার করা হবে, সেজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তাও স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় নেতারা প্রত্যাশা করেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে এপ্রিলের শুরুতে সরকার একটি রোডম্যাপ দেবে। এটি না দেওয়ার কারণে দেশে নতুন করে নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যা আগামীতে আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক দলগুলোও একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করছেন- নির্বাচনি কাজে মাঠে নামতে পারলে নানারকম গুজবসহ বিদ্যমান সংকটের অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু দলগুলো এখানো সেভাবে নামতে পারছে না। অথচ মানুষ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দেড় যুগ ধরে অপেক্ষা করছে।
গত তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এ কারণে আগের তিনটি পার্লামেন্ট ছিল ফ্যাসিবাদে ভরা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় দেশের মানুষ।
এদিকে সরকারের প্রায় ৮ মাস শেষ হতে চলছে, অথচ নির্বাচন নিয়ে কোনো কিছু দৃশ্যমান নয়। এ কারণে সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়ছে। তবে সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও অনাস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মাঠে নামার ইঙ্গিত দিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার হতে পারে না। বিএনপি এখন রাস্তায় নামে না। কিন্তু দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে আবার মাঠে নামবে।
১৬ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অহেতুক কোনো বিলম্ব না করে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচনও দরকার, প্রয়োজনীয় সংস্কারও হওয়া দরকার। তবে যৌক্তিক সময় মানে অস্পষ্ট বিষয় নয়। এটা লাগামহীন কোনো বিষয়ও নয়। অনেকে মনে করেন, আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচন চাই না-এটা ঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন না হলে ১৪, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচনে যা হয়েছে-ফের সেগুলো হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।’
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমাদের জোট বা দলের অবস্থান হলো দ্রুত নির্বাচন। নির্বাচন দেরি হলে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার যদি সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়, তাহলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন আদায়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে স্বল্প ও দীর্ঘ সংস্কারের কথা বলেছেন-সেখানে অনেক কিছু পরিষ্কার করেননি। সুতরাং এটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বলেছে নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন এবং তা ২০২৫-এর আগেই সম্ভব।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে তা প্রধান উপদেষ্টার জন্য একটা সম্মানজনক বিষয় হতে পারে। ফলে নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হবে; যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন
আরও পড়ুন