
প্রিন্ট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
পায়রা সমুদ্রবন্দর অর্থনীতির জন্য বিষফোড়া: উপদেষ্টা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম

আরও পড়ুন
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্প অর্থনীতির জন্য বিষফোড়া। তবুও একল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পায়রাকে সমুদ্রবন্দর না বলে একটি ঘাট বলা যায়।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে একই স্থানে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি জানান, সরকারি ক্রয় আইন সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ায় একক কোনো ঠিকাদার চক্রের বারবার কাজ পাওয়া বন্ধ হবে। এ ছাড়া প্রকল্প মনিটরিংয়ের জন্য অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হচ্ছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি)।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জানানো হয়, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের ১৪ হাজার ১৯৩ কোটি, বৈদেশিক ঋণের ৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ২৯ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর বলা হলেও সেটি মূলত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আনতে এই বন্দর করা হয়েছে। এটাকে সমুদ্রবন্দর তো দূরের কথা, নদীবন্দরও বলা যায় না। বাণিজ্য উপদেষ্টা তো বলেছিলেন, নদীর নাব্যতা হিসেবে এটাকে ঘাট বলা যায়। তবে এ প্রকল্পের জন্য প্রতিবছর ড্রেজিং করতে হবে। এতে প্রচুর অর্থ খরচ হবে। এটি বাদ দিয়ে বরং প্লেনে (বিমান) কয়লা আনা যায়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, যাই হোক ভুল প্রকল্প হলেও অনেক কাজ হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই শেষ করতে হবে। কেননা এটি না থাকলে আবার কয়লা আনা যাবে না। ফলে এত বড় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তো আর বন্ধ করা যায় না। এটি বানাতেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তবে আমাকে সরেজমিন গিয়ে প্রকল্প দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করায় সুন্দরবনের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি গিয়ে দেখব। কিন্তু হয়তো কিছুই করার থাকবে না।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরেক দফা ব্যয় বাড়িয়ে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ফলে মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় বাড়তি খরচ হবে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল। কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে দেড় বছরের এ প্রকল্পটিতে সময় লাগবে ৭ বছর।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অনেক প্রকল্পে মেয়াদ দেখছি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ে একটি জাতীয় নির্বাচনেরও কথা শুনছি। তাহলে তো একসঙ্গেই সব হলে খারাপ হয় না। তিনি জানান, দুদিন আগে সরকারি ক্রয় আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে দরপত্রে ১০ শতাংশ দর প্রস্তাবের যে সীমা আইনে আছে তা বাদ যাচ্ছে। ফলে একক ঠিকাদার চক্রের কাজ পাওয়ার পথ বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে আইএমইডিকে শক্তিশালী করা হবে। যা প্রকল্প অনলাইনে থাকবে এবং শতভাগ দরপত্র ইজিপিতে যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, অনুমোদন হওয়া মানে প্রকল্প টাকা খরচ শুরু হয়। বাস্তবায়নের যেকোনো সময় যদি অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকল্প গ্রহণের শুরু থেকেই লাভ-ক্ষতির হিসাব করা হয়নি। ফলে এখন অনেক প্রকল্প ভুল করে নেওয়া হলেও বাদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেননা ভূমি অধিগ্রহণসহ আনুষাঙ্গিক অনেক কাজই এসব প্রকল্পে করা হয়েছে।