Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

হলমার্ক কেলেঙ্কারি

ভুয়া নথির ঋণ ছাড়ে এসকে সুরের প্রভাব

অলিখিত গভর্নরের ভূমিকায় ছিলেন তিনি * নিয়মিত পরিদর্শন ও অডিট প্রতিবেদনে বাধা

Icon

আসাদুল্লা লায়ন

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভুয়া নথির ঋণ ছাড়ে এসকে সুরের প্রভাব

জাল নথিপত্রে সোনালী ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এসকে সুর) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের একটি মামলার পার্ট তদন্ত করে অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি। এ সংস্থার তদন্তে হলমার্কের মালিক তানভীরের সঙ্গে এসকে সুরের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ও ঋণ ছাড়ে প্রভাব বিস্তারের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় পদে থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন সুর। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, সব ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করা এবং অডিট প্রতিবেদন দেওয়া। ঋণ জালিয়াতির ঘটনার সময় এসকে সুর সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন করপোরেট শাখায় পরিদর্শন ও অডিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন। তাদের নিয়মিত পরিদর্শন এবং অডিট প্রতিবেদন দিতে বাধা দিয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন।

সম্পদ বিবরণী না দেওয়ার অভিযোগের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১৪ জানুয়ারি এসকে সুরকে গ্রেফতার করে। পরে সিআইডির আবেদনে ২৭ জানুয়ারি হলমার্কের বিরুদ্ধে ৭ বছর আগে রাজধানীর পল্লবী থানায় দুদকের করা এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক ছায়েদুর রহমানের আবেদনের পর মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি এসকে সুরকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। বর্তমান ও সাবেক একাধিক ব্যাংকার যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি নির্বিঘ্নে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করে গেছেন। তার সময়ে বেশিরভাগ ঋণ ছাড় ও লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক খাত ধ্বংসের শুরুটা হয় তার হাত দিয়েই। যদিও তিনি কখনো গভর্নর ছিলেন না। কিন্তু অলিখিতভাবে গভর্নরের ভূমিকায় ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হলেও মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক চালাতেন এসকে সুর চৌধুরী।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) বাসির উদ্দিন বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা একটি মামলার তদন্ত চলছে। এ মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। মামলাটির তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

মানি লন্ডারিং আইনে করা এ সংক্রান্ত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হলমার্ক গ্রুপের কর্মকর্তা ছিলেন তুষার আহমেদ ও আসলাম উদ্দিন। তুষার আহমেদের বক্তব্য অনুসারে তিনি হলমার্ক গ্রুপের জিএম (কমার্শিয়াল) হিসাবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন এবং তা রেজিস্ট্রারের রেকর্ডও তা সমর্থন করে। হলমার্ক গ্রুপে চাকরিকালীন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে তুষার আহমেদ ও আসলাম উদ্দিনের যৌথ নামে ঢাকা ব্যাংক, আসলাম উদ্দিনের একক নামে ঢাকা ব্যাংক ও তুষার আহমেদের একক নামে ঢাকা ব্যাংক প্লাটিনাম হিসাব পরিচালিত হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমে আসামি তুষার আহমেদ, মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন, সুমন ভূঁইয়া অপরাধলব্ধ ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক লেয়ারিং করে অবৈধ উৎস গোপন করেছেন।

নথিপত্র জাল করে সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের মামলায় গত বছরের ১৯ মার্চ হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুদকের করা ওই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ভুয়া এলসি (ঋণপত্র) খুলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম