মৌসুমে সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগ
কৃষকের ছোট হিমাগার কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে: উপদেষ্টা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম

মৌসুমে সবজি উৎপাদন করে প্রতিবছরই মূল্য পাচ্ছে না কৃষক। পাশাপাশি সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। এতে বছরের পর বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পরও মলিন থাকছে কৃষকের মুখ। তবে এই দিন বদলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফসল রক্ষা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারের ‘কৃষকের শীতল ঘর’ নামে হিমাগার তৈরি করা হয়েছে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন কৃষক।
বুধবার কৃষকের এই মিনি কোল্ডস্টোরেজ কার্যক্রম ও খামারি অ্যাপের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এ সময় তিনি বলেন, কৃষকের মিনি কোল্ডস্টোরেজ ও খামারি অ্যাপ কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি বলেন, একটা সময় জনসংখ্যার চেয়ে কৃষি জমির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এখন কৃষি জমি কমেছে, জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। এরপরও কৃষকরা ভালো উৎপাদনের মধ্যদিয়ে আমাদের একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রেখেছেন।
কম কৃষি জমিতে অধিক ফলন, পচনশীল কৃষি পণ্য সংরক্ষণের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে খামারি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল সংরক্ষণের জন্য মিনি কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সারা দেশে ১০০ মিনি কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করা হবে। এ প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাশরুরের তত্ত্বাবধানে দুটি মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হয়েছে। সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারের ঘরের ভেতরে ও খোলা আকাশের নিচে কনটেইনারভিত্তিক সৌরচালিতভাবে তৈরি করা হয়। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য আধুনিক শীতল সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যকে সঠিক সময়ে বাজারে উঠানো। এর মাধ্যমে মৌসুমে দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ, ফসলের অপচয় রোধ ও কৃষকের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা কমবে। কৃষক সরাসরি বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন। কমবে মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষকের শীতল ঘরের মাধ্যমে আমরা ফসলের অপচয় কমাব। কৃষকদের লাভজনক উৎপাদনের সুযোগ বাড়বে। সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করা হবে। এ বিষয়ে কৃষককে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। আপাতত সারা দেশে এ রকম আরও ১০০ মিনি কোল্ডস্টোরেজ সরকার নির্মাণ করে দেবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, এই কোল্ডস্টোরেজ কৃষকের জন্য নতুন দরজা খুলবে। এখন কৃষক নিজেই ফসল সংরক্ষণের মাধ্যমে দর নির্ধারণ করতে পারবেন। উন্নত এই প্রযুক্তি আমরা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাশরুর বলেন, স্থানীয় ও আমেরিকান হাইটেক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের শীতল ঘর তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক এবং রিয়েল টাইম তদারকি সুবিধা থাকায় মোবাইলে ঘরে বসে এই মিনি কোল্ডস্টোরেজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মাত্র ৫ লাখ টাকায় কৃষক নিজের বাড়িতেই এটি তৈরি করতে পারবেন। আর কনটেইনারে সোলারসহ বানাতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা। প্রচলিত কোল্ডস্টোরেজের চেয়ে এখানে খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কম লাগবে।