পদোন্নতির দাবিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ‘কলম বিরতির’ হুঁশিয়ারি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

প্রতীকী ছবি
এক সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়া না হলে আগামী মাসে সারা দেশে ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিরেক্টর কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয় বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম।
পদোন্নতিযোগ্য সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সুপারনিউমারারি বা সংখ্যাতিরিক্ত হিসেবে পদোন্নতি দাবি করে সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি আদায় না হলে প্রথমে তিন দিন ২ ঘণ্টা করে এবং পরবর্তীতে টানা কলম বিরতিতে যাওয়া হবে। এই কর্মসূচি শুরু হলে ওই সময়ে তারা কোনো রোগী দেখবেন না। কেবল জরুরি সেবা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যে পদোন্নতি চাচ্ছি সেখানে অর্থনৈতিক বা বেতন বৃদ্ধির বিষয় নেই। এটা শুধুমাত্র পদোন্নতির জন্য।’

সদস্য সচিব আমিন বলেন, বিসিএস স্বাস্থ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চাকরির নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি দেওয়া হয় কাজের মান ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, বিভাগীয় পরীক্ষায় পাশ এবং ফাউন্ডেশন ট্রেনিং সম্পন্ন করা থাকলে চাকরি স্থায়ী হয়। চাকরি স্থায়ী এবং চাকরির চার বছর হলে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দেওয়া যায়। এরপর উত্তীর্ণরা পদোন্নতির যোগ্য হয় বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
আমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এফসিপিএস/এমডি/ডিপ্লোমা) লাগে, যা মোটেও কোনো সহজ সাধ্য ব্যাপার নয়। বর্তমান পদোন্নতি জটে আটকে পড়ে আছেন যোগ্য চিকিৎসকরা। যেসব চিকিৎসক প্রমোশনযোগ্য হয়ে দীর্ঘদিন বসে আছেন তাদের ন্যায্য প্রমোশন হলে বেতন স্কেলের কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না এবং পদোন্নতিতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে না। কেননা এদের বেশির ভাগই নিজ নিজ গ্রেড/সমমান ও তদূর্ধ্ব বেতনপ্রাপ্ত।’
স্বাস্থ্য ক্যাডারে অবহেলা ও সংকটের সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাব মোসুমী বলেন, ‘দশ বছর আগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শেষ করেও এখন আমি একটি উপজেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে আছি। যেমন কোনো সাবজেক্টে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক আবার কোনো সাবজেক্টে আরপি/আরএস থেকে জুনিয়র কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক নেওয়া হয়। এর ফলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য তৈরি হয়। কোনো সাবজেক্টে আবার ৬ষ্ঠ গ্রেডের তেমন পদই নেই, যেমন ডেন্টাল। কিছু বিশেষ ক্যাডারের চাকরিতে নির্দিষ্ট সময়ের পর ২য় ও ১ম গ্রেড প্রাপ্ত হয়, কিন্তু স্বাস্থ্য ক্যাডারকে কোনো কারণ ছাড়াই এটা থেকে বঞ্চিত করা হয়, এর উত্তর আমরা চাই।’
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, দেশে প্রায় সাত হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসার/ডেন্টাল সার্জন হয়ে একই পদে প্রায় ১০-১৫ বছর প্রমোশনের অপেক্ষায় বসে আছে। আর সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকরা এবং তাদের পরবর্তী পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন! বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়মিতকরণ করা হয়নি গত অনেক বছর। যার কারণে আন্তঃক্যাডার ও অন্য ক্যাডারের সঙ্গে দিন দিন বৈষম্য শুধু বাড়ছেই। এই বৈষম্য কমাতে পদোন্নতি বঞ্চিত চিকিৎসকদের ‘ভুতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিতে হবে’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক বশির।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক মির্জা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যোগ্য সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্রুত সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দিতে হবে। এই দাবিতে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।