পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন’স ডে আজ
বাসন্তী রঙে রাঙা ভালোবাসা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অনেকটাই কমে গেছে শীতের হিমেল ভাব। বাতাসও আর শরীরে কাঁপন ধরায় না। এক ধরনের আরামদায়ক উষ্ণতা টের পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। শিমুল-পলাশ-অশোকও শাখায় শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়েছে। দূর থেকে ভেসে আসে মন উদাস করা ফুলের সুবাস।
সেই সুবাসে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে মন। প্রকৃতিতে ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। তাইতো ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির এত বর্ণিল সাজ। অন্যদিকে বসন্তের এ আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে হৃদয়েও লেগেছে দোলা। কারণ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস এবারও এসেছে হাত ধরাধরি করে।
আজ বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস পালন করা হবে একই দিনে। ফাগুনের প্রথম দিনটিতে হবে ভালোবাসার জয়গান। সর্বস্তরের মানুষ বিশেষত তরুণ-তরুণী বসন্ত উৎসবে মেতে উঠবে। প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন একে অন্যের পরিপূরক। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে প্রেমের ঋতু। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পাবে। মনের মানুষকে মনের কথা বলবে প্রেমিক যুগল।
একই সঙ্গে বসন্তের হাওয়া দোলা দিচ্ছে মনোজগতে। কবির ভাষায়-‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ কিংবা-‘আসিবে তুমি জানি প্রিয়/আনন্দে বনে বসন্ত এলো/ভুবন হলো সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর’। বাংলা বছর গণনায় ফাল্গুন ১১তম মাস হলেও কালের আবর্তনে এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি শুধু একটি মাসের নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। বসন্তকে সামনে রেখে গ্রামবাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তি রঙেই।
কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে বসন্তের আবহ। তবে আজ হবে প্রকৃত অর্থেই পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রায় সাজাবে নিজেদের। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও ধরা দেবে হলুদ পাঞ্জাবি সমেত একরাশ ফাল্গুনি সাজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, সর্বত্রই তারুণ্যের জোয়ারে ভাসবে।
ঢাকার বাইরেও জেলা শহর ও নানা জায়গায় বিশেষ করে ক্যাম্পাস ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো থাকবে তরুণদের দখলে। প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে। ফুল, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত খুদেবার্তায় ভরে যাবে মোবাইল ফোনের ইনবক্স। এ দিনে সবাই ছুটবে অমর একুশে বইমেলায়। বসন্ত ও ভালোবাসাকে ঘিরে তারুণ্যের এ জোয়ার প্রকৃতপক্ষে চলবে বইমেলার বাকি সময়টা জুড়েই।
এদিকে দিনটি স্মরণীয় করতে এবং প্রিয়জনকে ভালোলাগা ও ভালোবাসার অভিব্যক্তি জানাতে সবচেয়ে বড় উপহার হচ্ছে ফুল। বাসন্তী ও লাল রঙের শাড়িতে তরুণীরা সাজবে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে। এ দিন প্রেমিক প্রেমিকাকে উপহার দেবে লাল গোলাপ।
বসন্তবরণে নানা আয়োজন : প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় হবে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব।’ এ বছরের বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রসংগীতে সূচনা হবে উৎসবের। সকালের পর্বের অনুষ্ঠান শেষ হবে ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে।
এরপর বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু পরের পর্বের আয়োজন। এখানেও গান, নাচসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নেবেন শিল্পীরা। সমগীতের বসন্ত উৎসব শুরু হবে সকাল ৯টা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বটতলায় এই আয়োজনে গান গাইবেন কফিল আহমেদ, সায়ান। শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজন শুরু হবে বিকাল ৩টায়। রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গণে আয়োজনে থাকবে আলোচনা সভা ও নৃত্য পরিবেশনা। পরে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে শিল্পীরা যাবেন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্রে রয়েছে বসন্তবরণের আয়োজন, যা শুরু হবে বিকাল ৩টায়। ছায়ানটের বসন্তের অনুষ্ঠান ছায়ানট মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সন্ধ্যায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘লাভ লেটার্স’। এতে পাঠ-অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার।
‘ভালোবাসা পদক ২০২৫’ : বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের ৩৩ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে ভালোবাসা দিবস উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে যায়যায়দিন ও ইস্টিশন কমিউনিকেশন্সের যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করা হচ্ছে ‘ভালোবাসা পদক’। এ উপলক্ষ্যে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।