Logo
Logo
×

অন্যান্য

কৃত্রিম সংকটে বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, ক্ষুব্ধ ভোক্তা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

কৃত্রিম সংকটে বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, ক্ষুব্ধ ভোক্তা

ফাইল ছবি

বাজারে প্রতি সপ্তাহে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তা। অনেকেই সয়াবিনের বিপরীতে সরিষার তেল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ছাড়া বিক্রির জন্য তেল না পেয়ে বিক্রেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গত দুই মাস ধরে চাহিদার তুলনায় কম পেলেও সপ্তাহ ধরে কোম্পানিগুলোর ৮-১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে তেল দেওয়া হচ্ছে না। এতে এক প্রকার সয়াবিন তেলশূন্য হয়ে পড়ছে খুচরা বাজার। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন ভোক্তা।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে দুই-এক দোকানে তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য মুছে বিক্রি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের মূল্য গিয়ে ঠেকেছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে শীতের সবজির দামে সন্তুষ্ট ক্রেতা। তবে মাছ-মাংস উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. শামীম হাওলাদার। প্রথম একটি দোকানে এক লিটার সয়াবিন তেল দিতে বললে দোকানি বলেন এক লিটারের তেল নাই, ৫ লিটারের বোতল নিতে হবে। পরে তিনি আরেক দোকানে গিয়ে তেল চাইতেই দোকানি বলেন- কিছুক্ষণ আগেই শেষ। বাজারে আরেক মুদি দোকানে গেলেও বিক্রেতা একই কথা বলেন। আরেক দোকানে এক লিটারের বোতলজাত তেল মিললেও বিক্রেতা মূল্য জানান ১৯০ টাকা। পরে শামীম হাওলাদার তেলের বোতল হাতে নিয়ে দেখেন বোতলের গায়ের মূল্য মুছে দেওয়া হয়েছে। তিনি বিক্রেতাকে সরকারি মূল্যে ১৭৫ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান- এই দামে তেল পাওয়া যাবে না। নিতে হলে ১৯০ টাকায় নিতে হবে।

বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে রায় সাহেব বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোনো মুদি দোকানেই এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার লিটার ২০০ টাকা। বাজারে আসা ক্রেতাদের বোতলজাত না পেয়ে ২০০ টাকা লিটারে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে দেখা গেছে। তবে এই তেলের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫৭ টাকা।

দুপুর ১টার দিকে বনশ্রী ৪নং ব্লকের ভুঁইয়াপাড়া রোডের বাসিন্দা হিরনা আহসান প্রথমে তেল কিনতে মহল্লার ঐশী গ্রোসারি এজেন্সিতে যান। সেখানে এক লিটারের বোতল তেল চাইলে দোকানি কোনো সয়াবিন তেল নাই বলে জানান। পরে যান সিকান্দার জেনারেল স্টোরে। সেখানেও তেল নাই। এরপর জিসান এন্টারপ্রাইজে গেলেও তেল না পেয়ে আরেক দোকানে যান। সেখানেও সয়াবিন তেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরিষার তেল নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

এমন অবস্থা রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজারেও। সেখানে ৬টি খুচরা দোকান ঘুরে দুইটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেছে। তবে বোতলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯৫-২০০ টাকা। 

কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা নাজমুল বলেন, রোজার আগে সরকারিভাবে ফের দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলো জোটবদ্ধ হয়েছে। কোম্পানিগুলো নানাভাবে বিক্রেতাদেরও চাপে ফেলে তেল বিক্রি করছে। তেল পেতে হলে কোম্পানিগুলো তাদের ৮-১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করছে। সেক্ষেত্রে রূপচাঁদা তেল পেতে চাইলে ব্র্যান্ডটির ছোট-বড় সব সাইজের সরিষার তেল নিতে হচ্ছে। তীর সয়াবিনের সঙ্গে লবণ ও সব ধরনের গুঁড়া মসলা নিতে হচ্ছে। পুষ্টি কোম্পানির তেল নিতে চাইলে ওই ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা নিতে হচ্ছে। ডিলারদের কাছ থেকে সান ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল পেতে হলে ওই ব্র্যান্ডের লবণ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া চা-পাতা ও অন্যান্য পণ্য নিতে হচ্ছে। এতে অনেক দোকানি তেল নেওয়া বন্ধ রেখেছেন। ফলে সংকট আরও বাড়ছে।

এদিকে খুচরা বাজারে শীতের সবজির দামে সন্তুষ্ট ক্রেতা, তবে মাছ-মাংস উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি শিম বিচিসহ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, আর বিচি ছাড়া ৩০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ টাকা ও শালগম ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খুচরা বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০-৩০ টাকা, শসা কেজি ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। 

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৩০-৩৫০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। আর বাজারে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, প্রতি কেজি চাষের কই ৩০০ টাকা, বড় পুঁটি ২৫০ টাকা, টাকি ৩৫০ টাকা ও তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিংড়ি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, শোল মাছ ৬৫০ টাকা, রুই মাছের কেজি ৩৫০ টাকা, কাতল ৩২০-৩৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৪০০-৫০০ টাকা ও বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম