Logo
Logo
×

অন্যান্য

একদফা দাবিতে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি সাবেক বিডিআর সদস্যদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

একদফা দাবিতে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি সাবেক বিডিআর সদস্যদের

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং সব কারাবন্দির মুক্তির একদফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘মার্চ টু কোর্ট’ ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার। 

বুধবার রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক সম্মেলন থেকে তারা এ ঘোষণা দেন। 

এর আগে দুপুরে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ‘নিরপরাধ’ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। তারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে ‘সেনা হত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। এতে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় তীব্র যনজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পর সন্ধ্যায় শাহবাগ ছেড়ে চলে যান আন্দোলনকারীরা।

বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে ফিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবিতে রাতে আমরা শহিদ মিনারে অবস্থা কর্মসূচি পালন করব। যদি ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না দেখি, তাহলে বৃহস্পতিবার শাহবাগ ব্লকেড করা হবে। একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। বিডিআর ৪৬ ব্যাচের সদস্য কেএ রাজ্জাক বলেন, আমরা রাতেও শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। ন্যায়বিচারের আভাসের জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শহিদ মিনারে অপেক্ষা করব। যদি ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না পাই, তাহলে আমরা শাহবাগ ব্লকেড করব।

আন্দোলনকারীরা জানান, বুধবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। আন্দোলনকারীরা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সাবেক বিডিআর সদস্যদের পাশাপাশি কারাগারে থাকা পরিবারে লোকজনও অংশ নেন।

বিডিআর পরিবারের সদস্যরা বলেন, তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নীলনকশার অংশ হিসাবেই ২০০৯ সালে পরীক্ষিত সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে বিডিআর সদস্যদের ফাঁসানো হয়। বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিস্ফোরক মামলায় সবার জামিনের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে আলটিমেটাম দেন তারা। 

আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে সেনা হত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহিদ মিনার থেকে পদযাত্রা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। পদযাত্রা করে শাহবাগ মোড়ে এলে পুলিশ আটকে দেয়। 

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে পরিবারের সদস্যরা আন্দোলন করেন। তারা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আটকে দেওয়া হয়। পরে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেয়।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহিদপরিবারের সদস্যরা। ১৫ বছর আগে এ হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয় সরকার।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, আন্দোলনরত সদস্যদের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেয়। পরে সন্ধ্যায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে চলে যান আন্দোলনকারীরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম