বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ ও নিন্দা
আগরতলায় হাইকমিশনে আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও বিক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বিক্ষোভ ও বিবৃতিতে দলগুলোর দাবি, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত। ভারত এখনো মনে করছে তাদের বন্ধুত্ব শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেই বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্য শত্রুতায় নেমেছে সেটা সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই জানিয়ে দলগুলোর নেতারা আরও বলেছেন, এ ধরনের নজিরবিহীন হামলা ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন, ১৯৬১’ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারত সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আমাদের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সর্বস্তরের জনগণ।
আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত-মির্জা ফখরুল : মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন। উগ্রবাদীদের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামের সংগঠনের সদস্যরা সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা হয়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে যে, আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসাবে বাংলাদেশে-ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে। আমরা আশা করব, নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন ও বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালের যেসব নেতা ভারতে অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন।
জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না-গোলাম পরওয়ার : গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের হাইকমিশনে ভাঙচুর চালানো ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া জেনেভা কনভেনশন, আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি। এ ঘটনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিনষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ বলেই আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, ভারত নিজের দেশে তার প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার তাদের থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ তাদের মাথার ওপর কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না। আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে চোখ-কান খোলা রেখে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যই বিদেশি যে কোনো আগ্রাসন রুখে দিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। বাংলাদেশও বিশ্বের সব দেশের কাছে একই নীতি আশা করে।
বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি-রিজভী : দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মনে রাখবেন বাংলাদেশ লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে দিলির দাসত্ব করতে নয়। যে সেবাদাসী হতে চেয়েছিলেন সেই দাসী এখন আপনাদের পদতলে। ক্ষমতা হারিয়ে বিতাড়িত হওয়ায় হাসিনার চেয়ে বেশি পাগল হয়ে গেছে ভারতীয় বিজেপি সরকার ও উগ্রবাদীরা। মরিয়া হয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের আরেক ছদ্মবেশী শিখন্ডি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী পাঠাতে বলছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবদেশেই রয়েছে ধর্মের নামে অথবা বর্ণের নামে উগ্রবাদীদের দৌরাত্ম্য। তারা সব দেশ, জাতি-গোষ্ঠী, সব সমাজ, সব ধর্মের জন্য চরম ক্ষতিকারক। দুঃখের বিষয় হলো কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ভারতের চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে-উসকানিতে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান এই উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করুন। ভারতের সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু চরম উগ্রবাদী বিজেপি যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায় তাহলে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক প্রতিটা মানুষ এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব-সম্মান আত্মমর্যাদা রক্ষায় রুখে দাঁড়াবে। দুর্জয় এ বাংলাদেশ কখনোই মাথা নোয়াবে না।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হিংস্র আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ও ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ছেলেরাও মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত কিন্তু শত্রুতা করতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মেনে নেবে না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন না। বাংলাদেশের মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যারাই নিরাপত্তাহীন মনে করেন তারা সরকারকে জানান। সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ নেই। জন্মভূমির প্রতি অনুগত থাকুন। বিজেপি ভারতকে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ভারতের মতো উগ্রবাদী কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র ভেবে কত কিছু দিয়েছে কিন্তু ভারত সরকার সীমান্তে রক্ত, লাশ আর আগ্রাসন ছাড়া কিছু দেয়নি।
নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ : ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এদিন দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোর ঘুরে ফের নয়াপল্টনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে বিপুল সংখ্যক বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী অংশ নেন।
দুই দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি করবে-আসম রব : নিন্দা জানিয়েছেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন দেওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। এই ধরনের মদদপ্রাপ্ত ও পূর্বপরিকল্পিত হামলা দুই দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এটা ভারত এবং বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রশ্নে উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত। মনে রাখা দরকার রাজনীতিতে ঘৃণা বা উগ্রবাদের বিষবাষ্প ছড়ানো কোনো দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। আশা করছি, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ভিত্তিক সরকার বদলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সরকার এবং জনগণ শ্রদ্ধাশীল থেকে দুই দেশের স্বাভাবিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবেন।
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো ছাড় দেব না-মাহমুদুর রহমান মান্না : তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামের উগ্রবাদী সংগঠন বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে যে হামলা করেছে তা বাংলাদেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচনা করা যায়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে হামলা, ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হবেন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা শত্রুতা চাই না। কিন্তু নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, দেশের জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা কোনো ছাড় দেব না। তিনি বলেন, সহকারী হাইকমিশনে হামলা প্রতিহত করতে না পারা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার জন্য ভারতকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট অলির নিন্দা: তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। এক বিবৃতিতে অলি বলেন, বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশ যদি ত্রিপুরা থেকে আনারস ও কাঁঠাল কেনা বন্ধ করে তাহলে তারা না খেয়ে মারা যাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশ। তারা অন্য দেশকে সম্মান করতে জানে। আমাদের মনুষত্ব এখনও বিলুপ্ত হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অলি বলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যখন মুসলমানদের ওপর হামলা হয়েছে, তখন মমতা কোথায় ছিলেন? তখন কেন তিনি এর প্রতিবাদ করেননি। জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আবেদন জানানোর আগে ভারতের প্রতিটি রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। এদিকে আক্রমণের প্রতিবাদে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন এলডিপির নেতাকর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ : মঙ্গলবার বিকালে ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে দলটির মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ভারত তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের ওপর ক্ষেপে গেছে। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে সবকিছু করে দেশকে গিলে খাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। দেশ ভারতের রাহু মুক্ত হয়েছে। ভারতের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে এখন আর কিছু হচ্ছে না। তাই ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন পায়ে পারা দিয়ে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে।
সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি-গণঅধিকার পরিষদ : গণঅধিকার পরিষদের পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে হামলা বিজেপি সরকারের অপতৎপরতার ও বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ। এই হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি। ভারতের এসব কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় আওয়ামী লীগ নিজেদের বিদায় ও পরাজয় মেনে নিতে পারলেও স্বৈরাচার হাসিনার বিদায় ভারত মানতে পারছে না। ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কোনো ধরনের উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার সহিত সবকিছু মোকাবিলা করছে। সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিকালে বিজয়নগরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শাহবাগে জাতীয় নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ : শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অনিক রয় বলেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার হওয়া সব অসম চুক্তি মানুষের সামনে উন্মোচন করে বাতিল করতে হবে। সাহিদ মোস্তাফিজ বলেন, ভারত যদি আগের মতো বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তাহলে বলতে চাই- শরীরে বিন্দুমাত্র রক্ত থাকা পর্যন্ত ভারতের আধিপত্য মানবো না। দিল্লির গোলামকে যেভাবে পালাতে বাধ্য করেছি, একইভাবে দিল্লিকে আমরা রুখে দেব ইনশাআল্লাহ।
ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ : যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান, মঙ্গলবার ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে জেলা ও মহানগর বিএনপি, ফরিদপুর জেলা বিএনপি, বরিশালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও বরিশাল মহানগর বিএনপি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ জনতা, খুলনার কয়রায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে সচেতন নাগরিক সমাজ, রংপুরে মহানগর বিএনপি, জয়পুরহাটে ‘সর্বস্তরের জনগণ’, বগুড়ায় জেলা বিএনপি এবং মৌলভীবাজারে জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। খুলনায় সোমবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।