বিজয়ের নেশায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আরও প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ধরাশায়ী হতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সুনিশ্চিত পরাজয় জেনে চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে তারা। চালাতে থাকে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ। তবে বিজয়ের নেশায় আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের আক্রমণে পিছু হটে পাক বাহিনী। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাংলার বীর সন্তানরা। এর মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। এদিনে মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাক বাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ পাক হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও পাক বাহিনি তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পালটা আক্রমণ করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্র“কে আক্রমণ করলে পাক বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। পাক কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর সেকশন কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন এবং ৩ নম্বর সেকশন কমান্ডার আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে পরিচালিত অতর্কিত আক্রমণে তিন পাক হানাদার ও সাত রাজাকার নিহত এবং সাত পাক সৈন্য আহত হয়। পরে পাক হানাদাররা লাশগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।
শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে মুক্তিযোদ্ধাদের আর কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। পরাজয় নিশ্চিত জেনে মরণকামড় দিতে শুরু করে দখলদার বাহিনী।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজি তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে দেয় নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতেই গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখযুদ্ধের গতি বাড়ে। প্রবাসী সরকার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়, বাংলাদেশের বিজয় আসন্ন। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর প্রচারিত হতে থাকে। রেডিওতে বাজে জয়ের গান। রাজধানী ঢাকায় গেরিলাযোদ্ধারা একের পর এক গুঁড়িয়ে দিতে থাকেন দখলদারদের আস্তানা।