সিইউএসের সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা
ভৌত পরিকল্পনার অভাবে দেশে বিশৃঙ্খল উন্নয়ন হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
পরিকল্পিত উন্নয়নের মূলনীতি জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা তৈরি হয়নি বলেই দেশে অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খল উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, পৃথিবীতে পরিকল্পিত উন্নয়নের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। সেখান থেকে যেকোনো একটি বিষয় বেছে নিয়ে তা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত পরিকল্পিত উন্নয়নের মূলনীতি প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পরিকল্পনানীতি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাজধানীর ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে প্রকৌশলী-পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ জানান, একটি উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে সমন্বিত উন্নয়নের জন্য মৌলিক ৩টি ধারায় সমান্তরালভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেগুলো হলো: প্রথমত- সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা; এটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়। এটি বাংলাদেশে আছে। দ্বিতীয়ত- জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটির বাংলাদেশে অনুপস্থিতি রয়েছে। এটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কোনো আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। তৃতীয়ত- প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কার্যক্রম করা; এটি বেশ আগে শুরু হলেও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো খুবই দুর্বল।
তিনি জানান, জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা না থাকায় দেশে কার্যকর বিবেচনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরফলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়ন ঘটছে। এটা রুখে দিতে প্রয়োজন জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা। এ বিষয় নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
মো. নুরুল্লাহ বলেন, দেশের বিদ্যমান অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে ভৌত পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক সেল ও ভৌত পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা দরকার। এই কমিশনের মাধ্যমে দেশের চলমান ভৌত অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে নিয়ম অনুসারে আইন, নীতিমালা, ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিল এবং ভৌত পরিকল্পনা স্থাপন করতে হবে। দেশে ভৌত পরিকল্পনার কার্যক্রম শুরু করার যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের তিন ধরনের ধারণা রয়েছে। সেগুলো হলো- ১. ভৌত পরিকল্পনা ২. নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ৩. স্থানিক পরিকল্পনা। এখন আমাদের এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা দরকার। কোনটি আমরা গ্রহণ করবো। তা না হলে পরিকল্পিত বাংলাদেশ গঠন এবং বিশৃঙ্খল উন্নয়ন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
নগর গবেষণা কেন্দ্রের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মরতুজা বলেন, বর্তমান সময়ে ভৌত পরিকল্পনা না করে স্থানিক পরিকল্পনা করা দরকার। এটার মাধ্যমে ভৌতসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। তাতে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও উন্মুক্ত জায়গাসহ সবকিছুর সমাধান করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা আইন ও প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরি। তবে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য স্থানিক পরিকল্পনা খুবই জরুরি। এর আওতায় ভৌত পরিকল্পনা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার কারণে ভৌতের পাশাপাশি অন্যান্য জীবের জন্যও পরিকল্পনা করতে হবে। সেটা স্থানিক পরিকল্পনায় যথাযথভাবে করা সম্ভব হবে। এজন্য জাতিসংঘের কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করা দেশ হিসেবে বাংলাদেশে স্থানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একত্রে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে এখানকার অবস্থানের আলোকে পরিকল্পনা করতে হবে।
মেহেদী আহসান বলেন, নগর পরিকল্পনা সংস্থার কমিশন গঠন জরুরি। এজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক-উর-রহমান বলেন, অবকাঠামো দুই ধরনের। এর একটি ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার ও অপরটি সোশ্যাল স্ট্রাকচার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পরিকল্পিত উন্নয়নের নীতি ঠিক করেছে। বাংলাদেশে এখানকার মতো করে করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ঢাকা শহর আরও বড় হচ্ছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত বড় হতে থাকবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিকল্পনার আপডেট হচ্ছে। মূল বিষয় ধারণ করে এটার পরিবর্তন হতে পারে। সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।
স্থপতি-পরিকল্পনাবিদ সালমা এ. শফি বলেন, স্ট্রাকচার প্ল্যানের আওতায় ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান করা হয়ে থাকে। তবে ঢাকার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এটা দুঃখজনক।