সংবাদ সম্মেলনে গুমের শিকার ব্যক্তিরা
সাবেক র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচার চাই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
র্যাবের সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচার দাবি করেছেন তার হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিরা। র্যাবের কসাই নামে পরিচিত ফারুকীর জঘন্য অপরাধের বিচার না হলে দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে র্যাব-১০ ও র্যাব-২ এর সাবেক কর্মকর্তা ফারুকী কারাগারে আছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘ক্রসফায়ারের কারিগর র্যাবের কসাই খ্যাত মহিউদ্দিন ফারুকীর ফাঁসি চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা এসব কথা বলেন।
সরকারবিরোধী লেখালেখির কারণে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছিলেন কৃষিবিদ ফসিউল আলম। তিনি বলেন, উত্তরার অফিস থেকে বের হলে আমাকে আটক করে মহিউদ্দিন ফারুকী মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যান। ‘তুই কেন সরকারের বিরুদ্ধে লিখিছ’ বলে আমাকে একটি ছোট কক্ষে আটকে রাখা হয়।
নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এ কারণে আমার ব্রেনের সামনের অংশ শুকিয়ে গেছে। আমার হাতের ওপর বুট পরে লাফিয়েছে। আমি হাত দিয়ে কিছু খেতে পারতাম না। আমার বৃদ্ধ বাবা আমাকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছেন। আমরা ফারুকীর ফাঁসি চাই।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হুমায়ূন কবির বলেন, আমি ব্লগে সরকারবিরোধী লেখালেখি করতাম। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু লিখিনি। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর একটি মামলার হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে লঞ্চ থেকে আমাকে কয়েকজন লোক চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। দুজন পিস্তল ধরা ছিল, আরেকজন আমার কোমরের বেল্ট ধরেছিল। একটা গাড়িতে করে তারা আমাকে অজানা কক্ষে নিয়ে যায়। তারা আমার মুখে লাথি মারে। এতে আমি চেয়ারসহ পরে যাই। আমার একটি দাঁত ভেঙে যায়। তারা আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। আমার এক কানে ইলেকট্রিক শক দেওয়ায় এখনো শুনতে পাই না। সেখানে অনেক বাস কাউন্টার ছিল।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বই প্রকাশ করায় দুই দফায় ২০১৮ সালের ২ আগস্ট ও ২৭ অক্টোবর গুমের শিকার হওয়া শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাজন ব্যাপারী বলেন, আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। অনেকবার ক্রসফায়ারের জন্য নেওয়া হয়েছে। মেরে ফেলা হলে লাশ কেউ চিনবে তাই পরনের গেঞ্জি-ট্রাউজারের নিচে বাসার কারও ফোন নম্বর আর নিজের নাম লিখে রাখতাম। একই কারণে ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট গুমের শিকার হন ওয়াসিম ইফতেখারুল হক।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে বই লেখার কারণে আমাকে গুমের শিকার হতে হয়। আমার নামে তিনটি মামলা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমরা ফারুকীর বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গুমের শিকার রেজওয়ানুল হক শোভন, ড. এনামুল হক মনি ও আ. জাবীদ।