তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইন ও কর বৃদ্ধির তাগিদ উপদেষ্টার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ফাইল ছবি
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ও তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ তাগিদ দেন।
এ সময় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকপণ্যের ওপর শক্তিশালী আইন ও কর বৃদ্ধি সম্পর্কে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
বৈঠককালে নূরজাহান বেগম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী এবং তামাকপণ্যের ওপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আইন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সোচ্চারভাবে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, তাদের অবদানেই বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে এবং তাদের সহযোগিতার মাধ্যমেই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এ সময় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইনিসিয়েটিভের (গ্যাভী) চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বাংলাদেশে তামাকের কারণে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন এবং এর সমাধানে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৩৫.৩%) এবং সারা বিশ্বে তৃতীয়। তাছাড়া দেশে প্রতিনিয়ত প্রায় চার কোটি মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন (গ্যাটস্ ২০১৭)। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ অধূমপায়ীদের থেকে ধূমপায়ীদের মৃত্যু তিনগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। কোনো দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সবার আগে দরকার একটি শক্তিশালী আইন। বাংলাদেশের বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে হলে আইনে ছয়টি ধারা সংশোধন/নতুন সংযোজন করতে হবে। যেমন- ১. আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা। অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা। ২. তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা। ৩. তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ৪. ই-সিগারেট, টোব্যাকো প্রোডাক্টসসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ৫. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা। ৬. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
বৈঠককালে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার এবং সাবেক চেয়ারম্যান (বিসিআইসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান ডব্লিউএইচও এফসিটিসি অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য। কারণ, এটি বাংলাদেশের অনেক মানুষকে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু এবং রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
এই বৈঠকে তথ্যচিত্রের সঙ্গে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। যেমন- তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন (২০০৫) ও তা সংশোধন (২০১৩) করার ফলে সিগারেট থেকে সরকারের রাজস্ব কমেনি বরং বেড়েছিল। ২০১৭-১৮ সালে সরকার তামাক খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করেছিল, একই সময়ে তার থেকে প্রায় ৩৪% বেশি খরচ হয় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়। তামাক খাতে কর্মরতদের সম্পর্কে তামাক কোম্পানিগুলো যে কথা বলে তা সঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ কোম্পানিগুলো বলে যে, দেশে পাঁচ-ছয় লাখ বিড়ি শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ৪৬ হাজারের মতো।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ ও কর্মসূচি) ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মামুনুর রশীদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা) যুগ্মসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রোজেক্ট কো-অরডিনেটর ডা. ইফতেখার মুহসিন।