দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ নানা ধরনের কিডনি রোগে ভুগছেন। কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল, যা বহন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই ২৫ শতাংশ রোগীর। ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলেও চিকিৎসা নিতে পারছে না প্রায় ৭০ শতাংশ কিডনি রোগী। তাই কিডনির বিভিন্ন রোগ প্রতিকার, চিকিৎসা সহজকরণ ও চিকিৎসার ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

কিডনি ফাউন্ডেশনের ২০তম বাৎসরিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা দেশের কিডনি রোগের এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। 

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান কিডনি বিশেষজ্ঞরা। তারা বাংলাদেশের কিডনি রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজেদের অভিজ্ঞতা আলোচনা করবেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। 

কিডনি রোগের চিকিৎসায় দ্রুত রোগ শনাক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কিডনি রোগীদের ৮০ শতাংশের বেশি যখন কিডনি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, তখন কিডনি রোগের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। তত দিনে দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসার ব্যয় বাড়ে। তা ছাড়া বেশিরভাগ রোগীকে বাঁচানোও সম্ভব হয়ে ওঠে না।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও গ্লোমেরুনেফ্রাইটিস। তাই প্রাথমিক সময়ে কিডনি রোগ শনাক্ত করার জন্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এই স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করে রোগীদের রোগ শনাক্ত করার প্রচেষ্টা করা উচিত। এতে অনেক রোগীকে কম খরচে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো সম্ভব হবে।

সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক রুহুল আমিন রুবেল। তিনি কিডনি চিকিৎসায় স্বল্প ব্যয় ও গবেষণার সফলতা তুলে ধরেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন আর রশিদ। তিনি বলেন, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার লোক কিডনি রোগে মারা যাচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যায়, তাদের বেশির ভাগই চিকিৎসার খরচ কুলাতে পারেনি। কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থের অভাবে পূর্ণ চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যয় কমাতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। চিকিৎসক, নার্স ও নেফ্রোলজিস্ট চিকিৎসকদের আরও সচেতনভাবে চিকিৎসা দিতে হবে।

সম্মেলনের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। 

তিনি জানান, ২০২৩ সাল থেকে কিডনি ফাউন্ডেশন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।

সভার সম্মানিত অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব। সভা শেষে অতিথিদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম মুহিবুর রহমান।