সংকট নিরসনে জুবায়েরপন্থিদের যে প্রস্তাব সাদপন্থিদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ নিরসনে জুবায়েরপন্থিদের আলোচনার আহ্বান জানিয়ে সমাধানমূলক প্রস্তাব দিয়েছেন সাদপন্থিরা। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দাওয়াত ও তাবলিগের উলামাকেরাম ও সাধারণ সাথীবৃন্দ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের ইমাম মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তাবলিগ জামাতের সাথিরা দলমতনির্বিশেষে সব ওলামায়ে কেরামের হিতাকাঙ্ক্ষী।বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করছি। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে ৭টি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব দিচ্ছি।
তার মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা বিচারক হিসাবে, সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হবে এবং সেখানে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটিই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, বিগত ৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের সমাবেশে দারুল উলুম দেওবন্দের মুখপাত্র মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী বলেছেন, তাবলিগের উভয় পক্ষই হক। দারুল উলুম দেওবন্দ উভয় পক্ষের কাছে যায় এবং উভয় পক্ষই দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে আসে। পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীও কয়েকদিন আগে বলেছেন, তাবলিগের উভয় পক্ষই আমাদের ভাই। ঠিক যেমন হানাফি ও শাফেয়ি মাজহাব। যে যার সঙ্গে ইচ্ছা করে, সে তার সঙ্গেই মেহনত করতে পারে। আগেও তিনি দুইবার বাংলাদেশের আলেমদের সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, আমরা সব সময় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের পক্ষে। আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু আপনারা লক্ষ করেছেন, আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থিরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা ৭ বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ করে নিয়েছে। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠককে উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে-আগের সরকারের সঙ্গে বসার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি না থাকলেও এই বৈষম্যবিরোধী সরকারের সঙ্গে বসতে আপত্তি কেন?
এ সময় তারা বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান
সেগুলো হলো-
১. বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২. বিগত ৭ বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতিমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাযের অনুসারী মূলধারার তাবলীগী সাথীদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া।
৩. কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতিমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া।
৪. ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতিমা ময়দানে মূলধারার ২ জন সাথীকে হত্যা ও পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউ মার্কেটে ৩ জন সাথীকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথীকে মারাত্মক আহত করার দায়ে জুবায়েরপন্থিদের নামে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির করা।
৫. সারা বাংলাদেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয়- এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করা।