রাষ্ট্রপতির অপসারণ: এবি পার্টির সঙ্গে ছাত্র আন্দোলন নেতাদের বৈঠক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৮ পিএম
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ প্রশ্নে ছাত্রনেতাদের সুপ্রিমকোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। সোমবার রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রপতিকেও আমরা অবৈধ মনে করি। যে সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ অবৈধ, সেই সংসদে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিও অবৈধ; কিন্তু এখানে একটা পরিহাস হচ্ছে, এই রাষ্ট্রপতির অধীনেই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। সেখানে ছাত্র-জনতা ও সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা করতে হয়েছে।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রে বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের ঝামেলা থাকে, অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া যায় না। সে সময় যে একটা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল, নানা কারণে তখন তা নেওয়া যায়নি। ফলে একটা বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে, অবৈধ রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেওয়াটা বৈধ হয়েছে কি না। আমরা মনে করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নিজেই নিজের পূর্ববর্তী বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। সেই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি শপথভঙ্গ করেছেন।’
মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির পদে থাকার কোনো যৌক্তিকতা ও বৈধতা নেই বলে উল্লেখ করে মজিবুর রহমান আরও বলেন, এই রাষ্ট্রপতিকে যদি আমরা বিদায় না করি বা তিনি যদি পদত্যাগ না করেন, এটা আমাদের জাতীয় জীবনের মহাসংকট হিসাবে থাকবে। এই বিতর্ক বারবার আমাদের কাছে ফিরে আসবে। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বা না থাকলে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দেবে কি না, এই প্রশ্নটা উঠেছে। এটা একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে তুলতেই পারে বা আমাদের মনে আসতেই পারে। সেজন্য আজকের আলোচনায় আমরা স্পষ্ট বলেছি, সুপ্রিমকোর্টের কাছে একটা রেফারেন্স চাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পক্ষ থেকে আরিফ সোহেল বলেন, এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপে হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে এবি পার্টি আমাদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়েছেন। এছাড়া আমরা সংবিধান ও ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ‘একটি প্রক্লেমেশন বা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে এবি পার্টি একমত পোষণ করেছে। আওয়ামী লীগের অধীন গত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার বিষয়েও এবি পার্টি একমত হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা বেশ কিছু জায়গায় ঐকমত্যে আসতে পেরেছি।’
এর আগে গত চার দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈঠকে এবি পার্টির পক্ষে অংশ নেন দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান প্রমুখ।
ছাত্রনেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।