মেট্রোরেল-পুলিশ নিয়ে বক্তব্যে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা দিলেন সমন্বয়ক হাসিব
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে শনিবার রাতে আলোচক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম। তার সঙ্গে আলোচক ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির সহ-স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি।
উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে হাসিবকে বলতে শোনা যায়, ‘মেট্রোরেলে আগুন না দিলে কিংবা পুলিশ হত্যা না করা হলে এত সহজে বিপ্লব অর্জন করা যেত না।’ তার এমন বক্তব্য এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তবে অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই সমন্বয়ক।
তিনি বলেছেন, ‘আমার খণ্ডিত বক্তব্য নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যম নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে আমি মনে করছি।’ রোববার নিজের ফেসবুক আইডিতে এসব কথা বলেন হাসিব আল ইসলাম।
টকশোতে যা বলেছিলেন হাসিব
৩১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই টকশোর ঠিক ১৬ মিনিটের মাথায় উপস্থাপক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামের কাছে প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যখন শপথ নেওয়া হয়েছিল, তখন কি আপস হয়নি?
তার উত্তরে হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘দেখুন, তখন আসলে আপস হয়নি। আমরা কিন্তু বলিনি যে, আমাদের আসলে বিপ্লবটা, যে অভ্যুত্থানটা রয়েছে তা সেই অভ্যুত্থানটা শেষ হয়ে গেছে শুধু সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। আমাদের যে এক দফার ঘোষণা, সেই ঘোষণাপত্রে আমরা সুস্পষ্টভাবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছিলাম। একটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ নিশ্চিত, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তখন শুধু আমাদের ফ্যাসিবাদের যে পতনটা সেটা কেবল হয়েছিল। বাকি যে দুটো স্টেপ রয়েছে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ নিশ্চিত এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তার মানে যে আমাদের লড়াইটা, আমাদের সংগ্রামটা, আমাদের বিপ্লবটা সেটা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। তার মানে আমাদের বিপ্লবটা চলমান রয়েছে।’
এরপরই তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এটাকে বিপ্লব বলছি কিংবা গণঅভ্যুত্থান, যাই বলেন না কেন, এটা কিন্তু কোনো সাংবিধানিক নিয়ম মেনে হয়নি, কোনো আইন মেনে হয়নি। আইন যদি মানতে যেতাম, তাহলে কিন্তু এই বিপ্লবগুলো হতো না। যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো, যদি পুলিশদেরকে না মারা হতো, তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজেই অর্জিত হতো না কিংবা এই ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না। সুতরাং এখানে কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, পৃথিবীতে যত বিপ্লবের ইতিহাস আপনি দেখবেন না কেন সবগুলো ইতিহাসই কিন্তু সংবিধানের কিংবা নিয়মের বাইরে গিয়ে কিন্তু বিপ্লবগুলো সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং এই জায়গায় আসলে আইনের জটিলতা কিংবা সাংবিধানিক পদ শূন্য হবে এরকম কথাগুলো উঠে আসছে, এই রকম কথা উঠে আসাটা বিপ্লবের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে না।’
সমালোচনার ঝড়
হাসিব আল ইসলামের বক্তব্য প্রচারের পর রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। তার কথাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া এবং পুলিশ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখেন কেউ কেউ। এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেন অনেকে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ হাসিবের বক্তব্যের অংশবিশেষ দিয়ে রিলস বানিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে। ক্যাপশনে লেখে,
“স্বীকারোক্তি!’’
‘পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। মেট্রোরেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। এরকম অনেক কিছুই করা হয়েছে। তা না হলে সরকারকে উৎখাত করা যেত না।’
-হাসিব আল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক
সব কিছুই ছিল পরিকল্পনার অংশ?”
ব্যাখ্যা দিলেন হাসিব
সমালোচনার মুখে রোববার নিজের ফেসবুক আইডিতে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন হাসিব। তিনি লেখেন, ‘আমার খণ্ডিত বক্তব্য নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যম নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে আমি মনে করছি।
গতকাল (শনিবার) ডিবিসি নিউজের ‘প্রযত্নে বাংলাদেশ’ টকশোতে সময় স্বল্পতার কারণে আমার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে আমার বক্তব্য কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কিছুটা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।’
হাসিব লেখেন, ‘আমার বক্তব্যে আমি মূলত বুঝাতে চেয়েছিলাম বিপ্লবের প্রেক্ষাপট নিয়ে। আলাপ করতে গিয়ে সময় স্বল্পতার কারণে শুধু দুটো বিষয় তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু এর ব্যাখ্যা দেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাই নাই।
আমি আমার বক্তব্যে বুঝাতে চেয়েছি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দম্ভের স্তম্ভ, তাদের তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প মেট্রোরেলে যখন তারা নিজেরাই আগুন দিয়ে তারপর সেটা নিয়ে মায়াকান্না জনমানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং এই ক্ষোভ ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ত্বরান্বিত করেছে।
আর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী দোসর পুলিশলীগ নির্বিচারে ছাত্র- জনতার উপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা পরিচালনা করেছিলো তখন দেশের সর্বস্তরের জনতা নিজেদের জীবন বাঁচাতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো, যেটা ছিলো মুক্তিকামী জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’
হাসিব লেখেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশকে ব্যবহার করে গণহত্যা পরিচালনা করছে এইজন্য এই অভ্যুত্থানে যত রক্তপাত হয়েছে এর দায় আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নিতে হবে। কারণ তারা জনতা ও পুলিশকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছিলো। এই দুটো বিষয় বুঝাতে গিয়ে সময় স্বল্পতার কারণে স্রেফ ঘটনা উল্লেখ করতে পেরেছি, পুরো বিষয় তুলে ধরা সম্ভব হয় নাই।’
‘আমার সাথে যোগাযোগ ও মতামত না নিয়েই আমার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করছেন যা খুবই হতাশার।’ বলে উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক।