ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ নিয়ে যা বললেন ছাত্রনেতারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম
ফাইল ছবি
বিগত ১৫ বছর ধরে হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নসহ নানা অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। এছাড়া গণমাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রায় সব সংগঠনই। এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে দেশের বড় দুই ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
বৃহস্পতিবার সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধের মাধ্যমে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, তাদেরকে হত্যা, নির্যাতন ও দখলদারিত্বের জন্য বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের নির্দেশ দাতা আওয়ামিলীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় না। ছাত্রলীগকে দেখা মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত শিক্ষার্থীকে মেরেছে, তার ছেড়ে বেশি একা ছাত্রলীগ মেরেছে।
এ সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, আইন অনুযায়ী ওদের প্রতিটা হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা জানায়, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী প্রমাণিত করে নিষিদ্ধ করায় সাধুবাদ জানায় ছাত্র ইউনিয়ন।
এর আগে গতকাল বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এসব কারণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২-এ এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা কমিটির গত মাসের এক হিসাবে দেখা যায়, জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে তখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।