তিন সদস্যের কমিটি গঠন
বিটিআরসির ৪ কর্মকর্তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪০ এএম
বিটিআরসি চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয় খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়।
২১ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জানে আলমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন-যুগ্মসচিব মাহবুব হাসান শাহীন ও উপসচিব শারমিন সুলতানা।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও সুশাসন) ও কমিটির সদস্য মাহবুব হাসান শাহীন যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আমরা অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ নিয়ে বিটিআরসির কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছি। সব তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর আমরা কমিটির সব সদস্য বসে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখব।
জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য চারজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে দায়ী করে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন কমিশনার, একজন পরিচালক এবং দুজন উপপরিচালকের নাম রয়েছে।
অভিযোগ আছে, এই চার শীর্ষ কর্মকর্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের স্বজন ও আত্মীয় হওয়ায় তারা বিটিআরসিজুড়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। গত ২৯ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার দপ্তরে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, বিটিআরসির সাবেক এক চেয়ারম্যানের ছেলে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা হওয়ায় অভিযুক্ত এক কমিশনার নিজের প্রভাব খাটিয়ে সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) ৫০০ কোটি টাকা ওই ব্যাংকে জমা দিতে বাধ্য করেন। ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে ওই ৫শ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আটকে আছে। এই টাকা জমা রাখা নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ই-নথিতে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন অভিযুক্ত কমিশনার।
মন্ত্রী ই-নথিতে এ বিষয়ে আলোচনা না করে কমিশনের সভায় উপস্থাপন করতে নির্দেশ দিলেও ওই চেয়ারম্যান ও কমিশনার কেউ তার কথা শোনেননি।
অভিযোগপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসের একজন পরিচালক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের পদোন্নতি ও জনবল নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়ান। তার এই ক্ষমতার মূল উৎস তার আপন চাচা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক পদে পদোন্নতিতে পাঁচ মাস কম থাকার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
বিটিআরসির একজন উপপরিচালক নিজে বয়স ঘষামাঝা করে কোনো লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই চাকরিতে যোগ দেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতিতে। বিটিআরসিতে স্টাফ অফিসারের কোনো পদ না থাকলেও তিনি ছিলেন সাবেক এক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠভাজন অফিসার। ২০১৩ সালে সহকারী পরিচালক পদে ফজলুর রহমান শেখ সর্বোচ্চ নম্বর পেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল করার অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বাদ দিতে মূল ক্রীড়নক ছিল এই উপপরিচালক।
অফিস সহায়ক খলিলের চুরি প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে চাকরিতে বহাল রাখা, খলিলের আত্মীয় শাহাদাত হোসেনকে তৃতীয় শ্রেণি থাকা সত্বেও আইটি সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কারিগরও এই উপপরিচালক। লাইসেন্স প্রদানের নামে আবেদনকারীদের কাছে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সাবেক চেয়ারম্যান। আর এসবের মূলে ছিল ওই উপপরিচালকের বাবার রাজনৈতিক জোর। তার বাবা ছিলেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের শীর্ষ কর্মকর্তা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়ের প্রটোকল অফিসার ও একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালনকারী দ্বাদশ সংসদের এমপি আলাউদ্দিন নাসিমের এক শ্যালিকার বিরুদ্ধেও বিটিআরসিতে ব্যাপক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আছে। জানা গেছে, বয়স ঘষামাঝা করে এমনকি লিখিত পরীক্ষা না দিয়েও সরাসরি চাকরিতে যোগ দেন এই উপপরিচালক। নিরীক্ষা ও মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্নাতকোত্তরের সনদ না থাকা সত্বেও ব্যত্যয় ঘটিয়ে তাকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। স্নাতকোত্তরের সনদ না থাকায় ২০২০ সালে তিনি কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।