পর্যালোচনা সভায় বক্তারা
স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের খসড়ায় অসংগতি রন্ধ্র্রে রন্ধ্রে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সেবাগ্রহীতার (রোগী) সুরক্ষাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে সরকার ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বারো অধ্যায়ের এই অধ্যাদেশে ৪৬টি ধারা এবং ১২টি উপধারা রয়েছে।
তবে এই ধারা-উপধারাগুলোতে কিছু প্রশসংনীয় দিক থাকলেও অসংগতি রয়েছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এ আইন পাশ হলে রোগী, চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান- সবাইকেই বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বর্তমান বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পর সুরক্ষা আইন প্রণয়নে হাত দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্ম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ’ নিয়ে পর্যালোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ খসড়া আইনে উল্লিখিত ধারার বিশদ ভুল ও অস্পষ্টতা তুলে ধরেন। এ আইনের নানা দুর্বলতা ও সমাধানে করণীয়ও উঠে আসে তার আলোচনায়।
সভায় আলোচকরা বলেন, এ আইন লেখার আগে গবেষণা করা হয়নি। নানা সেক্টরের আলোচনায় ওঠে আসা বক্তব্য ও প্রস্তাবগুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ খসড়া পূর্ণাঙ্গ নয়। এটাকে রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ন) করে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এ ছাড়া আইনে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। হাসপাতালের সংজ্ঞায় বিভ্রান্তি রয়েছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, খসড়া প্রস্তাবনায় বহু ফাঁকফোকর রয়েছে। এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়নি। এটি বাস্তবায়ন হলে তা আইন করা প্রয়োজন তাই করা হবে। এতে চিকিৎসক ও রোগী কোনো পক্ষই উপকৃত হবে না।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষার নামে সব আইনেই শুধু চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। রোগীর সুরক্ষার কথা সব আইনে নেই। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আদালত সরাসরি আমলে নেবে না। চিকিৎসকদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের পাঠানো রিপোর্ট পেলে আইন অনুযায়ী আদালত তখন তা আমলে নেবে কিনা তা দেখবে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার পাশাপাশি রোগীদেরও সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, আমরা যে খসড়া নিয়ে আলোচনা করছি তা স্বৈরাচারের আমলে তৈরি করা। আমি এখানে অন্তত ৪০টি ভুল ও হাস্যকর বিষয় দেখাতে পারব। যারা এটি করেছেন, তারা কোনো গবেষণা করেননি। এটি একটি আবর্জনা। এটি নিয়ে আলোচনা করা মানে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করা।
আলোচকরা আরও বলেন, এখানে কাউকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। এটি একটি দায়সারা কাজ। এখানে মোবাইল কোর্টের বিষয়টি আনা হয়েছে, যা যুক্তিযুক্ত নয়। এ ছাড়া অসংখ্য অসংগতি রয়েছে। যা গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে।
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য প্রশাসন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, আইনজ্ঞ, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন।