Logo
Logo
×

অন্যান্য

বিভিন্ন জেলায় সমন্বয়কদের সফর

বিপ্লবকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি দখলদারিতে ব্যস্ত একটি গোষ্ঠী

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ এএম

বিপ্লবকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি দখলদারিতে ব্যস্ত একটি গোষ্ঠী

ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী চাঁদাবাজি দখলদারি শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ। বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সফরে যাওয়ার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে মঙ্গলবার বরিশালে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ধরনের অপরাজনীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অপরাজনীতি আর অন্যায় ৫ আগস্টে শেষ হয়ে গেছে। 

রাঙামাটিতে মতবিনিময় সভায় আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, এ দেশের ছাত্রসমাজ ফের আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেখতে চায় না। কিশোরগঞ্জে মতবিনিময় সভায় দেশের সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকার দাবি করেছেন সমন্বয়করা। পাবনার জনসভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট দখলবাজরা এখনো সক্রিয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরও তাড়াতে হবে। 

সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত ফটোসাংবাদিক এটিএম তুরাবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের প্রতিনিধি দল। ওদিকে কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মতবিনিময় সভায় ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের প্রতিবেদন-   

বরিশাল: সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, যারা বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি করছে তাদের নাম জেলায় জেলায় সম্মেলন করে ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে চাপ দেওয়া হবে। আমরা জেলা উপজেলা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি। সবার সাথে কথা বলে আমরা একটি অথরাইজ কমিটি গঠন করে দেব। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে, সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব। 

হান্নান মাসুদ আরও বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য যারা বিপ্লব সংঘটিত করেছে, সেই ছাত্র-জনতাই রাষ্ট্র গঠন করবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র-জনতা কী চাচ্ছে রাষ্ট্র পুনঃগঠনে তাদের দাবিগুলো আমরা শুনছি ও লিখে নিয়ে যাচ্ছি। এরপর ঢাকায় একটি বড় সম্মেলন করে রাষ্ট্র পুনঃগঠনের রূপরেখা প্রদান করা হবে। 

এর আগে বরিশালের বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এ সময় শিক্ষকরা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। 

রাঙামাটি: শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো দেশে অরাজকতা চলতে থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও খেসারত দিতে হবে। দেশ মেরামত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এ দেশের ছাত্রসমাজ ফের আর কোনো ফ্যাসিষ্ট সরকার দেখতে চায় না। তিনি বলেন, রাঙামাটির শিক্ষাব্যবস্থা, যাতায়াত, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পাহাড়ে চাঁদাবাজিসহ সব বিষয় নিয়ে আমরা ঢাকা গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটির সঙ্গে একটির বিভেদ তৈরি করে দিয়েছিল হাসিনা সরকার। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে দিয়েছি সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেন একরকম করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, ছাত্ররাই এই দেশ পরিচালনায় রোডম্যাপ দেবে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলের যেসব সরকারি কর্মকর্তা আছেন, তাদের সব অনিয়ম, দুর্নীতি, অত্যাচার আর ঘুসবাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাদ মাহমুদ রাফি বলেন, সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, যেন দেশটি নিয়ে নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে। 

কিশোরগঞ্জ: পুরাতন স্টেডিয়ামে মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের সংস্কারকাজ শেষ না হবে, ততদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকবে। জুলাই বিপ্লবে শুধুমাত্র স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে হটানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, খুনি হাসিনা রেখে যাওয়া সাজানো লোকজন, দোসর- দালালরা এখনো রয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত এ-সব শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিচারকাজ সম্ভব না হবে ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষ স্বাধীন মনে করবে না। এ মতবিনিময় সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তৈহিদ সিয়াম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক স্বর্ণা আক্তার রিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ অঞ্চলের টিম লিডার লুৎফর রহমান, কিশোরগঞ্জের সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন ও সহসমন্বয়ক এনামুল হক নাঈম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

পাবনা: পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে ছাত্র-জনতা ও সুধী সমাবেশে সফরকারী দলের প্রধান সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে গেছে। নাম উল্লেখ না করে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, তারা ভেবেই নিয়েছেন তারা সরকার গঠন করে ফেলেছেন। শহিদদের রক্তের দাগের ওপর দিয়ে তাদের এই স্বপ্ন কোনো দিনই বাস্তবায়ন হবে না। বন্দুকের নলের সামনে তারা মাথা নত করেননি। তাদের কাছেও নত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এলাকার দখলবাজ, চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটদের প্রতিরোধ করার আহবান জানান। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা পাবনায় কোটাবিরোধী বৈষম্য আন্দোলনে শহিদ ছাত্র জাহিদুল ও নিলয়ের কবর জিয়ারত এবং শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলরুমে পাবনার সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন।  

সিলেট: নগরীর যতরপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ফটোসাংবাদিক এটিএম তুরাবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও সিলেটের সমন্বয়করা। 

সাক্ষাৎকালে সমন্বয়করা তুরাবের মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদেছেন। এ সময় পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা জানান তারা। নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সমন্বয়করা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক রেদোয়ান আহমেদ, ফয়সল হোসেন, সিলেট জেলার সমন্বয়ক ফয়সল হোসেন, আবু সাইদ, দেলোয়ার হোসেন, গোলাম মর্তুজাসহ স্থানীয় নেতারা। 

কুমিল্লা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। নগরীর টাউনহল মাঠে জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের চেতনাকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শুরুর আগে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের দাবি, একটি পক্ষ এসভা বানচালের চেষ্টা করার জন্য এটা ঘটিয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়কজন শিক্ষার্থী বলেন, মতবিনিময় সভা শুরুর আগে হঠাৎ করেই টাউন হলের পশ্চিম পাশের একটি ভবনের পাশ থেকে কয়েকজন এসে একে একে তিনটি ককটেল মেরে পালিয়ে যায়। এতে সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা এসে ককটেলগুলোর পরিত্যক্ত অংশ উদ্ধার করে। আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ অন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম