ঢাবির আলোচিত সেই অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌসের জীবনের গল্প
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
পারিবারিক আবহে ছোটবেলা থেকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাহসী ভূমিকা পালনকারী ঢাবির আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের আলোচিত অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে তিনি সোচ্চার ছিলেন।
এবারও কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নয়, পারিবারিক শিক্ষার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, আমি বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। চাচা-ফুফু সবাইকে নিয়ে বড় একটা সংসারের মধ্যে আমাদের বেড়ে ওঠা। খেতে বসলে রাজনীতি নিয়ে কথা উঠতো। তো পরিবারের ছোট যে সদস্য ছিল সেও তার মতামত দিত, বড়রা তাকে বুঝাচ্ছে। এখানে যেটা হয় আমাদের মধ্যে কথা বলা বা না বলার একটা প্র্যাকটিস ছোটবেলা থেকেই ছিল। এ কারণেই হয়তো প্রতিবাদ করাটা বা অন্যায়ের সাথে আপোষ না করাটা আমার স্বভাবজাত।
তিনি বলেন, আব্বা মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতির সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তাকে সবসময় দেখেছি। দলের বা যে কোনো বিষয়ে অন্যায়ের সঙ্গে কখনও আপোষ করেননি। সেটাই হয় তো আমার ভেতরে আছে। আমার বাকী বোনদের মধ্যেও এ স্বভাব রয়েছে। আমি যে খুব ভিন্ন তা নয়।
চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারো কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি সম্মান রেখে ‘না’ বলতে শিখেছি। অন্যায় মানে অবশ্যই ‘না’। বড় থেকে শুরু করে ছোট প্রত্যেকেরই ‘না’ বলবার অধিকার আছে। এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। এটা রাজনৈতিক মতাদর্শ না।
ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএর পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম, লন্ডনেও পড়াশুনা করেছেন।
আর পড়ুন> আন্দোলনে আহতদের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দিলেন অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস
যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাশে থাকা এ শিক্ষিকা বলেন, আমি মূলত ৫ তারিখের পর থেকে হাসপাতালগুলোতে সক্রিয়ভাবে আহতদের পাশে থেকেছি। প্রথমদিকে আমার সাংগঠনিক কোনো শক্তি ছিলো না। আমি আহতদের ওখানে গিয়েছিলাম। ৫ তারিখের আগে তো রাজপথে আন্দোলন ছিল। তখন থেকেই জানতে পারছিলাম যে হাসপাতালগুলোতে অনেক আহত মানুষ ভর্তি আছে। আন্দোলনের সময় তাই হাসপাতালগুলোতে যাওয়ার খুব একটা সময় হয়নি। ওই একটা অন্যায়বোধ কাজ করতো। যে কারণে ৫ তারিখের পর থেকে আমি ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম।
তিনি বলেন, আমি গিয়ে প্রথম যেদিন দাঁড়াই, আমার জীবনে এই বাস্তবতা না দেখলে বোধহয় ভালো হতো। এ বাস্তবতা যে কত করুণ কত দুর্বিষহ, এটা যে ওই সময় হাসপাতালে না গিয়েছে সে বুঝবে না। আহতদের ক্ষত তখন একবারে দগদগে, বুলেটের আঘাত যে কত তীব্র হয়, কারো চোখে স্প্লিন্টার, কারো পুরো শরীরে রাবার বুলেট। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ছোট শিশু কেউ তো বাদ যায়নি।
শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেক মানুষ আহতদের পাশে ছিলে জানিয়ে সায়মা ফেরদৌস বলেন, আইসিইউ ইউনিটেও অনেক রোগী ছিল। তখন তো একবারে ছন্নছাড়া অবস্থা। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী কিছু ছিল বাকি আরও ৪০ জনের মতো শুরু থেকেই কিছু মানুষ সমন্বয় করছিল। ওরা যা করেছে আমি এই প্রজন্ম নিয়ে গর্ব করি।
আরও পড়ুন> গুলিবিদ্ধ ৯ বছরের মুসার স্মৃতি রোমন্থন করে আপ্লুত সায়মা ফেরদৌস