মুস্তাফা মনোয়ারে
বাংলাদেশের প্রবীণ চিত্রশিল্পী, নাট্যব্যক্তিত্ব মুস্তাফা মনোয়ার গুরুতর অসুস্থ৷ গত বুধবার বিকেলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত শনিবার বিকাল থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে৷
মুস্তাফা মনোয়ারের ব্যক্তিগত সহকারী মো. রুবেল মিয়া রোববার রাতে এ তথ্য জানান৷
তিনি বলেন, স্যারের অবস্থা খুবই খারাপ৷ আপনারা সবাই দোয়া করেন তার জন্য৷ বাংলাদেশের পাপেটম্যান হিসেবে খ্যাত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সারে
ভুগছেন।
রুবেল মিয়া জানান, কিছুদিন আগে চিকিৎসার জন্যে মুস্তাফা মনোয়ার দিল্লিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা করানোর পর দেশে ফিরে সুস্থ ছিলেন। বুধবার বিকেলে তিনি বাসায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল মুস্তাফা মনোয়ারের ৮৯তম জন্মদিন৷ ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর মাগুরার নাকোল গ্রামে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার৷ কলকাতায় বেড়ে উঠলেও তার স্কুল জীবন ছিল বাংলাদেশে৷ বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের সময় মুস্তাফা মনোয়ার নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়েন৷ উত্তাল সেই সময়ের গল্প তিনি শহরের দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছিলেন৷ এর দায়ে তাকে ও তার মেঝ দুলাভাইকে জেলে পাঠায় পুলিশ৷ পরে মেট্রিকুলেশন পাস করার পরে মুস্তাফা মনোয়ার চলে যান কলকাতায়, ভর্তি হন চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে৷ পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তিনি সেখানে প্রভাষক পদে যোগ দেন৷ সে সময়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় মুস্তাফা মনোয়ার তার জলরঙ সিরিজের একটি একক প্রদর্শনী করেন৷ এই প্রদর্শনীর পরে তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি৷
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভারতে অবস্থানকালীন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৬৪ সালে বিটিভিতে প্রযোজক পদে যোগ দেন, পরে তিনি মহাপরিচালকের পদে আসীন হন৷
১৯৭৩ সালে মুস্তাফা মনোয়ার 'রক্তকরবী' নাটক তৈরি করেছিলেন। মুস্তফা মনোয়ারের উল্লেখযোগ্য শৈল্পিক সৃষ্টি পাপেট। পাপেটকে শিশু কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেন৷ বাংলাদেশের পাপেটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তুলে ধরতে তিনি বড় ভূমিকা পালন করেন৷ সাফ গেমসের একটি আসরে তার 'মিশুক' পাপেটটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো৷ চারুকলার গৌরবময় অবদান ও কীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালে মুস্তাফা মনোয়ার একুশে পদক পান৷ ব্যক্তিগত জীবনে শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জনক।