Logo
Logo
×

অন্যান্য

বৈষম্য দূরীকরণে ২ মহাসড়কে শ্রমিক বিক্ষোভ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৮ পিএম

বৈষম্য দূরীকরণে ২ মহাসড়কে শ্রমিক বিক্ষোভ

বিভিন্ন দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-সিলেট এবং গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার শ্রমিকরা। তারা মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেন। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কালিয়াকৈরে ২১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা। শনিবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার বোর্ডঘর এলাকায় স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের শ্রমিকরা এ কর্মবিরতি পালন করেন। উপজেলার বোর্ডঘর এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ারে আগুন ও স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন।

জানা গেছে, অবিলম্বে এইচআরডি, এজিএম সুরজিৎ মুখার্জি এবং প্রোডাকশন সিনিয়র ম্যানেজার দিপালক কর্মকার, সিনিয়র ম্যানেজার জাহিদুর রহমান, শামীম আক্তার এইচআরডি, রুহুল আমিন এইচ কেভি ইনচার্জকে পদত্যাগ, বৈষম্যবিরোধী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনে কোনো কর্মীকে পরবর্তী সময়ে কোনো প্রকার হয়রানি বা চাকরিচ্যুত করা যাবে না। এ মর্মে তার বিশ্বাসযোগ্য নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। যদি পরবর্তী সময়ে কোনো কর্মীকে কোনো প্রকার হয়রানি কিংবা চাকরিজনিত কোনো আইনমূলক কিছু করা হয়, তাহলে তার ফলস্বরূপ যা কিছু ঘটবে তা সম্পূর্ণ দায়ভার স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে হবে। সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনসহ ২১ দফা দাবিতে কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ করেছেন ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ১০ বছর চাকরি করলেও পার্মানেন্ট করা হয়নি। প্রত্যেক শ্রমিককে দুই বেলা খাবার পাশ দিতে হবে। খাবার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্য রাখা যাবে না। খাবার মান উন্নয়ন করতে হবে। খাবার মেন্যু পরিবর্তন করতে হবে। সব মিলিয়ে ২১টি দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সদস্য দেখা যায়নি।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তুষ্ট দেখা দিয়েছে। উত্তেজিত শ্রমিকরা ১৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল ১০টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার রূপসী এলাকায় অবস্থিত শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে এ অসন্তোষ দেখা দেয়।

১৭ দফা দাবি হলো— নতুন কর্মচারী যারা যোগদান করবে, তাদের বেতন ১৭ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে এবং ছয় মাসের মধ্যে স্থায়ীকরণের পর বেতন কাঠামো ২০ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। প্রতি বছর বেতন ৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি করতে হবে। দুই ঈদের বোনাস দিতে হবে বেতনের সমপরিমাণ ও বৈশাখী বোনাস দিতে হবে, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটি চালু করতে হবে, নাইট ডিউটি থাকলে ৫০০ টাকা করে দিতে হবে, ওভারটাইম হার ১০০ শতাংশ দিতে হবে এবং বেতনের সঙ্গে দিতে হবে, দুপুরের খাবারের মান উন্নয়ন করতে হবে এবং সকালের নাস্তা দিতে হবে ওভারটাইম থাকলে নাস্তার বিল বাড়াতে হবে, মাহে রমজান মাসে ইফতারের মান ভালো করতে হবে এবং ক্যান্টিন বিল তিন হাজার টাকা দিতে হবে, কোম্পানি কর্তৃক কোনো শ্রমিককে যদি চাকরিচ্যুত করা হয়, তাহলে তাকে কমপক্ষে তিন মাসের বেতন দিয়ে চাকরিচ্যুত করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকর্মী থেকে শুরু করে সকল কর্মচারীর কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা করতে হবে, প্রভিড বোনাস ৫% করে দিতে হবে, হাজিরা বোনাস দিতে হবে ১ হাজার টাকা, সকল সরকারি ছুটি কোম্পানির ছুটির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ছুটির হয়রানি বন্ধ করতে হবে, বাসা ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দিতে হবে, সুপারভাইজার ও অপারেটরদের বেতন ৬০ পার্সেন্ট বৃদ্ধি করতে হবে, শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা যাবে না আর চাকরিচ্যুত করা হলে সকল শ্রমিকের পক্ষে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে কোম্পানি নিজ অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সর্বশেষ অ্যাডমিন ম্যানেজারের পদত্যাগ চাই।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন শ্রমিকদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বারবার মানিকপক্ষকে বলার পরও ইসমাইল হোসেনকে অপসারণ করা হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ওই ১৭ দফা দাবি জানিয়ে আসছিল মালিকপক্ষের কাছে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ১৭ দফা দাবি না মানার কারণে শনিবার সকালে কাজে যোগদান না করে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় নানা ধরনের স্লোগানে স্লোগানে ১৭ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন উত্তেজিত শ্রমিকরা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মালিকপক্ষ অ্যাডমিন ম্যানেজার ইসমাইল হোসেনকে তাৎক্ষণিক অপসারণ করেন এবং অন্যান্য দাবি বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন শ্রমিকদের। পরে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে কারখানায় গিয়ে কাজে যোগদান করেন। 

শরিফ গ্রুপের এজিএম মো. মফিজুর রহমান বলেন, এখানে শরিফ গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানা। এ কারখানায় প্রায় ৪ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার ইসমাইল হোসেনকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বাস্তবায়ন করার জন্য বিবেচনা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম