বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিবকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
জনরোষে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পলাতক রয়েছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। তার অনুপস্থিতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খানকে জুমার নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
এদিকে ওয়ালীয়ুর রহমান খানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি শেখ মুজিব, ১৫ আগস্ট ও ‘শহিদ’ শব্দ নিয়ে কথা বলেছেন। পরে এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ওয়ালীয়ুর রহমান খান বলেন, বঙ্গবুন্ধ একেবারেই জানতেন না— ঘুম থেকে উঠেছেন পর তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার সঙ্গে অন্যরা, তারা প্রচলিত আইনে বা শরিয়া আইনে কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নন তাদের হত্যা করা হয়েছে, তাহলে তারা শহিদ। আর অন্য দৃষ্টিতে সেখানে অবলা নারী ছিলেন, মাসুম বাচ্চা শিশু ছেলে রাসেল ছিলেন তাকে হত্যা করার কোনো আইন নেই বা কোনো বৈধতা নেই— মানবতার কোনো স্তরেই এটা পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, আজ পর্যন্ত আমার আগে আরও অনেক এ ঘটনার সাক্ষী এ ইতিহাস জানা লাখ লাখ আলেম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কোনো আলেম কিন্তু এ বিষয়ে কোনো দলিল দিয়ে সমর্থন করে না। কোনো আলেম কোনো ইসলামি দল বা কোনো সাধারণ ইসলমপন্থিরা কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না, সমর্থনও করেনি। কোনো আলেম কিন্তু এটি নিয়ে কোনো কলামও লিখেনি। আমিও সেই সুরেই কথা বলছি— আমি নতুন কিছু বলছি না।
এই গবেষক বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাই প্রথম শহিদ বলতেন না, তাদের মধ্যে ইসলামের থেকে দূরত্ব ছিল। তারা মনে করতেন শহিদ শব্দটা পকিস্তানের পরিভাষা। শহিদ শব্দটা স্বাধীনতাবিরোধীরা বলে। শহিদ শব্দটা আওয়ামী লীগের পরিপন্থি। তাই আপনি দেখবেন ১৫ আগস্ট এই নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কোনো লেখায় শেখ মুজিবসহ কাউকে শহিদ বলা হয়নি। এবং শাহাদাতবার্ষিকী বলা হতো না। এই গত ১৫-১৬ বছর থেকে শাহাদাতবাষির্কী বলা হচ্ছে। আগে মৃত্যুবার্ষিকী তারই বলত। এই জন্য আমরা মনে করি, এখন তাদের উপলব্ধি হয়েছে। এখন ১৫ আগস্টকে জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী বলা হচ্ছে। এখন ১৫ আগস্টে নিহত সবাইকে শহিদ বলা হচ্ছে। মানুষ এভাবে দোয়াও করছেন। শেখ মুজিবের অবদান অনেক, তার নেতৃত্বে জাতি সংগঠিত হয়েছিল দেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিশেষ করে ২৫ মার্চে পাক বাহিনীর অত্যাচারের পর জাতি যে সংগঠিত হলো এবং দেশ যে স্বাধীন হলো এগুলো তো স্বীকার করতে হবে।
ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খানের প্রতিবাদ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি ছবির খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান।
শনিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজের দায়িত্ব নিয়ে আমার নাম ও একটি খণ্ডিত ছবি ব্যবহার করে কয়েকটি গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার হয়েছে তা সঠিক নয়। তাছাড়া নিউজে ব্যবহৃত ছবিটিও আলোচ্য বিষয়ের নয়।
ড. মাওলানা ওয়ালীয়ুর রহমান খান বলেন, বাস্তবতা হলো গত বছর জাতীয় ইমাম সম্মেলন-২০২৩ উপলক্ষ্যে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান বাংলাদেশ সফর করেন। তার ওই সফরে আমাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দোভাষী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জাতীয় ইমাম সম্মেলনে মসজিদে নববীর ইমামের বক্তব্য আমি উপস্থিত দর্শকদের জন্য অনুবাদ করে শোনাই। ওই সফরে মসজিদে নববীর ইমাম শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও আমি দোভাষী হিসেবে ছিলাম। মূলত ওই ছবিটি ব্যবহার করে এখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি আরও বলেন, মসজিদে নববীর ইমামের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের ছবিটির একাংশ কেটে এটিকে আমার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক বলে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব জায়গায় ছড়ানো হয়েছে। অথচ বাস্তবতা এমন ছিলো না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হিসেবে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা ও দোভাষী হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। এগুলো আমার অফিসিয়াল কর্তব্য হিসেবেই পালন করতে হয়েছে। সুতরাং এখন নতুন করে এসব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।