অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক
ঘুস লেনদেন ও চাঁদাবাজি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
সরকারি সেবার বিনিময়ে ঘুস এবং পোশাকশিল্পে নতুন করে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে সহায়তা চাইলেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সহিংসতার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণও চেয়েছে বিজিএমইএ।
মঙ্গলবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠকে এসব দাবি করেছেন ব্যবসায়ী মহল। ওই বৈঠকে শিল্পাঞ্চলে কড়া নিরাপত্তার দাবিও করা হয়েছে।
বৈঠকে সরকারি সেবা গ্রহণে ব্যবসায়ীদের কোনো ঘুস না দেওয়ার আহ্বান জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘আপনারা ব্যবসা করেন, কারখানার নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কারখানার নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী সবাই নিয়োজিত আছে। কয়েকদিন পর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করবে।’
ব্রিটিশ সরকারের সহায়তার বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেছেন, ‘ব্রিটিশ সরকার আমাদের সব সময় নানা ক্ষেত্রে পাশে থাকবে। ট্যাক্স, ভ্যাট রিফর্মের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। দেশের ব্যবসা ও উন্নয়নে আমাদের সহায়তা দেবে ব্রিটিশ সরকার।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদের দপ্তরে তার সঙ্গে প্রথমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিজিএমইএ নেতারা। সেখানে বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম খেলাপি ঋণ শ্রেণিকরণে ৩ কিস্তির পরিবর্তে ৬ কিস্তির বকেয়া বিবেচনা নেওয়ার দাবি জানান।
সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, ‘গত ৪৫ দিনের মধ্যে আমাদের ১৬-১৭ দিন উৎপাদন বন্ধ ছিল। পাশাপাশি বন্যার কারণেও চার-পাঁচ দিন রপ্তানি করা যায়নি।’
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক করেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের নেতারা। সেখানে ব্যবসায়ী সংগঠনকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে সংস্কার ও স্বচ্ছ নির্বাচনের তাগিদ দেন এফবিসিসিআইএ’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় নতুন করে কিছু কিছু জায়গায় পোশাক কারখানাগুলোতে এখন প্রচুর চাঁদাবাজি হচ্ছে। কারখানা চালাতে এ মুহূর্তে এটাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করেন তিনি।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন বিদেশি ব্র্যান্ডক্রেতারা। কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বন্দরে কনটেইনার জট- এসব কারণে সময়মতো পণ্য পাবে কিনা এ নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে অন্য দেশে রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নেওয়ার ভাবনাও ছিল তাদের মধ্যে। তবে আজ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। উপদেষ্টা বলেছেন, ব্যবসার পরিবেশ ইতোমধ্যে অনেক উন্নত হয়েছে। এখন আর তেমন সমস্যা নেই। এতে ক্রেতারা আশ্বস্ত হয়েছে। সেনাবাহিনী জোরালোভাবে কাজ করছে। পুলিশ এবং শিল্পপুলিশও আস্তে আস্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে।
বৈঠকে জিএসপি সুবিধা নিয়ে আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেতে চাই।
তিনি বলেন, ‘এলসি খুলতে ছয়টা ব্যাংক মার্জিন চাচ্ছে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলবেন। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। কারখানার নিরাপত্তা জরুরি। তবে এটা সমাধান হয়ে যাবে। এখন কোনো ঝামেলা নেই। বায়ারদের একটা আস্থার অভাব ছিল এটাও কেটে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও বায়ারদের সঙ্গে কথা বলবেন এটা বড় পাওয়া।’
বর্তমানে ব্যবসার হালাচাল প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের শত শত ট্র্যাক মিরসরাই এলাকা পড়ে আছে। এগুলোতে নিরাপত্তার সমস্যা আছে। সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে। বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামে সমস্যা হচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জের পানগাও পোর্ট দ্রুত উন্নয়ন বা চালু করা দরকার।