Logo
Logo
×

অন্যান্য

কোটাবিরোধী অবরোধে ট্রেনযাত্রীদের চরম দুর্ভোগ, টিকিট ফেরত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ পিএম

কোটাবিরোধী অবরোধে ট্রেনযাত্রীদের চরম দুর্ভোগ, টিকিট ফেরত

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবরোধে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের সঙ্গে সারা দেশে ট্রেন চলাচল প্রায় ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ওই সময়ের মধ্যে কমলাপুর থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি, প্রবেশও করেনি। এর প্রভাব পড়েছে সমগ্র রেলওয়েতে। বিভিন্ন স্টেশন, আউটার এবং রেলপথে আটকে ছিল যাত্রীবাহী-মালবাহী ট্রেনও। অবরোধের কারণে অনিরাপত্তা ও বিলম্বে ট্রেন চলায় অনেক যাত্রী টিকিট ফেরত দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়ে গেছেন। 

বুধবার রাজধানীর মহাখালী ও কাওরান বাজার রেলপথে পালাক্রমে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে লাইন অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। টানা চলে বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কমলাপুর, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রেন আটকা পড়ে। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. সফিকুর রহমান যুগান্তরকে জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত রাজধানীর মহাখালী ও কাওরান বাজার রেলপথ আটকে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে কমলাপুর থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি- প্রবেশও করেনি। 

রেলের আর্থিক ক্ষতিসহ যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রেলওয়ে মাঠ পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সতর্কাবস্থায় ছিল। তিনি বলেন, বিলম্বে ট্রেন চালু হওয়ায় টিকিট কাটা যাত্রীদের একটি অংশ টিকিট ফেরত দিয়ে টিকিটের সমপরিমাণ টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন। অবরোধের কারণে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়নি। অবরোধ ওঠার পরপরই ট্রেন চালানো শুরু হয়। 

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে শত শত ট্রেন যাত্রী আটকা পড়ে। কোনো কোনো যাত্রী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষা করে- অবশেষে টিকিট ফেরত দিয়ে স্টেশন ত্যাগ করেছেন। 

অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানান, তিনিসহ পরিবারের ৫ সদস্য টিকিট কেটেছিলেন। কমলাপুরে প্রায় ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট ফেরত দিয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীরা রেলপথে অবরোধ না করলে সাধারণ মানুষের কল্যাণ হয়। সাধারণ মানুষও এ আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন। কিন্তু রেলপথকে অবরোধ না করাই ভালো। মানুষ যখন কোনো উপায় পাচ্ছে না- তখনই রেলপথে ভ্রমণ করতে যাচ্ছে। কিন্তু রেলপথ যখন বন্ধ, মানুষ আরও নিরুপায় হয়ে যায়। 

আলমগীর হোসেনের মতো বহু ট্রেনযাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবরোধ সারা দেশেই চলবে। দাবি আদায় না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। রেলপথেও আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে। 

এদিকে কাওরান বাজার রেলগেটে অবরোধ হওয়ায় লেভেলক্রসিংয়ের দুপাশের সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। কাওরান বাজার ও মহাখালী রেলগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেললাইনের ওপর কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশ ফেলে অবরোধ করছেন। এ ছাড়া রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড ফেলেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়িগুলো চলাচলের সুযোগ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। 

আন্দোলনে অংশ নেওয়া মহিউদ্দিন রনি যুগান্তরকে জানান, আন্দোলনকারীরা রেলপথেও অহিংস আন্দোলন করছে। লাইন আটকে অবরোধ করছে। কোনো ভাঙচুর করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত লাইন দখল করে অবরোধ চলে। ওই সময়ের মধ্যে কোনো ভাঙচুর করা হয়নি। আমাদের দাবির পক্ষে আমরা লাইন অবরোধ করি। 

ঢাকা রেলওয়ে থানা কমলাপুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস জানান, আন্দোলনকারীরা লাইন অবরোধকালে কোনো সহিংসতা করেনি। রেলওয়ে পুলিশ সতর্কাবস্থায় ছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেললাইনে কাঠ ফেলে অবরোধ করে রাখে। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেয়। 

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অবরোধে প্রায় ৮ ঘণ্টাব্যাপী কমলাপুর স্টেশনের সঙ্গে সব লাইনের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে, অনেক যাত্রী টিকিট ফেরত দিয়েছে। বিকাল সোয়া ৫টার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

চট্টগ্রামে রেলপথ অবরোধ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা অবরোধ করার কারণে সকাল ১০টার পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে নির্ধারিত কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। চট্টগ্রামগামী বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। এতে করে সড়ক ও রেলপথে চলাচলরত যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েতে হয়।

পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ১০টার পর থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনে কোনো ট্রেন পৌঁছতে পারেনি। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়েও যেতে পারেনি। রেললাইন অবরোধের কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। এ কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।’ 

বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেনলাইন অবরোধ : বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, ট্রেন থামিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড পালন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেন তারা। এছাড়া সকাল ১০টায় বাকৃবির মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেন তারা। ট্রেন অবরোধ করে আব্দুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম