দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারালেন সহকারী পুলিশ সুপার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম
অপকর্মে সহায়তা, দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইয়াকুব হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার এএসপি ইয়াকুব হোসেন কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর সার্কেলে কর্মরত থাকার সময় তার নিয়ন্ত্রণাধীন মিরপুর থানার সাবেক এসআই জীবন বিশ্বাস, কনস্টেবল আল আমিন, কনস্টেবল আব্দুস সবুর, গাড়িচালক কনস্টেবল সামিউল ও কনস্টেবল অনিকের সমন্বয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশে একটি টিম গঠন করেন।ওই টিমের সদস্য এসআই জীবন বিশ্বাস, কনস্টেবল আল আমিন ও কনস্টেবল আব্দুস সবুর ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার মোশারফপুর ৩নং ওয়ার্ডের লিপি কমিশনারের বাড়িতে আকস্মিকভাবে প্রবেশ করেন।
সেখানে মায়া নামের এক নারীর সঙ্গে অভিযোগকারী মো. আশরাফ হোসেন ও মো. শামীম রেজা অবস্থান করার সময় ওই পুলিশ সদস্যরা দুই অভিযোগকারীকে অবৈধ কাজ করার অভিযোগে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন এবং তাদের অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছবি তোলেন। পরবর্তীতে মিরপুর বাজারে বিকাশ ব্যবসায়ী সোহেল রানার মাধ্যমে অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা গ্রহণ করে তাদের ছেড়ে দেন। বিষয়টি এএসপি ইয়াকুব হোসেন অবগত থাকা সত্ত্বেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অপকর্মে সহায়তা করেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, উপরোক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।একই সঙ্গে গঠিত অভিযোগনামার বিপরীতে অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। পরে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কারণ দর্শানোর জবাব প্রদানপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন (সংলাগ-গ) তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তার কারণ দর্শানোর জবাব এবং প্রাসঙ্গিক সব তথ্যাদি পর্যালোচনা করে অভিযোগ প্র্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা প্রতীয়মান হওয়ায় আনীত অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৭(২)(ঘ) মোতাবেক বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা যথাযথভাবে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে এএসপি ইয়াকুব হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে মতামত পাওয়া যায়। সার্বিক পর্যালোচনায় অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনা করে এএসপি ইয়াকুব হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুদণ্ড আরোপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৭(৯) বিধি অনুসারে ২য় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ২য় কারণ দর্শানোর জবাব দেন।
এতে বলা হয়, দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর দাখিলকৃত জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন, অপরাধের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদিসহ সার্বিক বিবেচনায় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি-৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) মোতাবেক বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ইয়াকুব হোসেনের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি-৪ এর উপ-বিধি ৩ (খ) মোতাবেক তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে ইয়াকুব হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।